এক দেশে এক সুন্দরী রাজকন্যা ছিল। তার নাম ছিল স্নো-হোয়াইট। তার একজন হিংসুটে সৎ-মা ছিল। সেই সৎ-মায়ের একটা জাদু- আয়না ছিল। সেই সৎ-মা জাদু-আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করতঃ

জাদু-আয়না, বলতো, সবচেয়ে সেরা সুন্দরী কে?

-আরে, একি! একি! এই অবধি শুনে চটে যাচ্ছেন কেন? ভাবছেন, এই বহুদিনের পুরানো রূপকথার গল্পটা আপনাকে শোনাতে বসেছি কেন? বলছি , বলছি। এই গল্প শোনানোর একটা উদ্দেশ্য আছে। যেকোন ঘটনার পেছনেই একটা কার্য-কারণ থাকে। ঐ যে জাদু আয়না, স্নো-হোয়াইটের প্রাসাদের কোন এক ঘরে থাকতেন- তিনি হলেন গিয়ে -ইয়ে-মানে-বিশ্বাস করবেন কিনা জানিনা- আমার উর্ধ্বতন দ্বাদশ পুরুষ !! বিশ্বাস করেন নি তো? জানতাম তো- করবেন না। কিন্তু সত্যি বলছি, সোনার গিলটি করা ফ্রেমে আঁটা সেই বেলজিয়াম কাঁচের তৈরি দশ ফুট বাই চার ফুটের আয়না মশাই সত্যি আমার পূর্বপুরুষ ছিলেন। তাঁর কথা সেই কবে থেকে শুনে আসছি। আয়না কূলে তাঁর কথা জানেনা এমন একজন ও পাবেন না। আর ধরে নিতে পারেন পৃথিবীর সব আয়নাই কোন না কোন ভাবে তাঁর বংশধর। তবে হ্যাঁ- এখন দিনকাল পালটে গেছে- সে রামও নেই, সে রাজত্ব ও নেই। কোথায় যেন শুনেছিলাম, মানুষ নাকি আগে খুব লম্বা লম্বা ছিল, যতদিন যাচ্ছে ক্রমশঃ বেঁটে হচ্ছে। আমাদেরও সেই দশা। দশ ফুট আয়না! আজকাল লোকের ঘরই শুনি লম্বায় চওড়ায় হয় দশ বারো ফুট মত। তা সেই অনুপাতে আয়নাও আড়ে-দির্ঘে ছোট হতে হতে কোনক্রমে বেঁচে আছে। স্ট্রাগল ফর এক্সিসটেন্স আর কাকে বলে! জাদু-দাদু [মানে সেই যাঁর কথা প্রথমেই বলেছি] বেঁচে থাকলে নির্ঘাত জলগ্রহণ ত্যাগ করতেন- যদি দেখতেন এখন আয়নারা ছোট হতে হতে শেষে কিনা আঙ্গুল-সমান হয়ে লিপস্টিকের বাক্সের গায়ে সেঁটে বসেছে!ডারউইন সাহেব বেঁচে থাকলে এ নিয়ে নিশ্চয় এক নতুন থিওরি লিখতেন। শুধু কি আয়তন! কোথায় জাদু-দাদুর সোনার ফ্রেম, আর কোথায় এখনকার-ছ্যা ছ্যা- রংবেরঙের প্লাস্টিক। ওটাই বলতে গেলে ন্যাশনাল ড্রেস কোড। যাদের এখনও কপাল ভালো,তাদের এখনও সেগুন, রোজউড, কি নিদেন পক্ষে শৌখিন রট আয়রন কি বেত জুটছে। আর কতদিন জুটবে জানিনা। 

এইখানে একটা কথা জানিয়ে রাখি। আমাদের আয়নাকুলের সবাই অবশ্য এ কথা স্বীকার করতে চায়না। তবে আমি করি। আমরা জাদু-দাদুর বংশধর হতে পারি বটে, কিন্তু জাদু-দাদুর ক্ষমতাটা কিন্তু কেউই পাইনি। ওই যে- রানী জিজ্ঞাসা করতো - কে সব থেকে বেশি সুন্দর- অমনি দাদু গমগমে গলায় বলে দিতো -"তুমি নয়, স্নো-হোয়াইট হল সেরা সুন্দরী..."- সে ক্ষমতাটা কিন্তু আমাদের কারোর নেই। সে ক্ষমতাটা জাদু-দাদুর সাথেই শেষ হয়ে গেছে। আমরা যতই চেষ্টা করিনা কেন, আমরা সেটা চেষ্টা করলেও পারব না। মুশকিল হল, সবাই সেটা ঠিক মানতে চায়না, বিশেষ করে মহিলারা!

এইরে, আপনি নিশ্চয় এখন বলবেন -দিব্যি নিজের গল্প করছিলে বাপু, এর মধ্যে মহিলা টেনে আনা কেন? আসলে সত্যি কথা হল, আমি যে এ বিষয়ে ভুক্তভোগী! আমার সামনে যত মহিলা এসে বসেন, তাঁরা সবাই আমাকে ভাবেন সেই জাদু-দাদু। সামনে বসেই নিজেকে বড় বড় চোখে আর আশেপাশের সবাইকে আড়চোখে দেখেন আর আমাকে প্রশ্ন করতে থাকেন - কে সুন্দর? আমিই তো?

আপনি এতক্ষনে হয়তো আন্দাজ করে ফেলেছেন কেন আমার সামনে এত মহিলা এসে বসেন; যদি না করে থাকেন, তবে জানাই- এই অধম একটি সৌন্দর্যশালার, মানে বাংলা ভাষায় যাকে বলে বিউটি পার্লার - সেই পার্লারের দেওয়ালে আটকে থাকা একটি চার ফুট বা তিন ফুট আয়না। পাশে আরো দুজন- খুড়তুতো-পিসতুতো।চেহারা নিয়ে গর্ব করার কিছু নেই- পাতি প্লাইউডের ফ্রেম, তার রঙ এককালে নীল বা সবুজ কিছু একটা ছিল, এখন বোঝা দায়। আগে বেশ ঝকঝকে তকতকে ছিলুম, ইদানীং কিছু বয়সের ছাপ পড়েছে- মানে পেছনের পারা খসে পড়ছে একটু একটু, ফলে সামনে খুব ছোট্ট ছোট্ট কালো কালো দাগ... আমার ব্ল্যাকহেডস আর কি!

এই পার্লার খুব একটা বড় নয়, কাজের মেয়েও কম। আমাদের মালকিন রোজ আসেন না, আজ এসেছেন। এখন পুজোর বাজার কিনা, এখন সারাদিনই খুব ভিড় লেগে থাকে। প্রতিমা, মঞ্জু, সবিতা- তিনজনে মিলেও সামাল দিয়ে উঠতে পারেনা। কত রকমের, কত বয়সের মহিলা - পনেরো থেকে পঞ্চাশ- সব আছে। কারোর চুলের রঙ পাল্টাতে হবে, তো কারোর মুখের দাগ মুছতে হবে; কারোর ভ্রু হরধনুর মত করে দিতে হবে, তো কার ক্যাট্রিনা কাইফের মত চুল চাই। কি ভাবছেন- আমি আবার ক্যাট্রিনা কাইফ কে চিনলাম কি করে? আরে কি ভাবেন মশাই- আমি সবাইকে চিনি- শুধু ক্যাট্রিনা-করিনা-প্রিয়াঙ্কা নয়, আমি পেনেলোপে ক্রুজ-অ্যাঞ্জেলিনা জোলিকেও চিনি। ওই সব দেশি-বিদেশি ফ্যাশন ম্যাগাজিন থেকে এদের ছবি দেখিয়েই তো কত মেয়ে নিজেদের চুলের স্টাইল ঠিক করে।

যাকগে, যা বলছিলাম, এখন দুপুর দুটো মত বাজে। আমাদের বারো বাই বারো ফুটের পার্লারের ভেতরে এখন বেশ কয়েকজন সুন্দরী। সুন্দরী বলতেই হবে - কারণ মেয়েরা তো সব্বাই সুন্দরী হয়, তাই না? মাঝখানের চেয়ারে মোটাসোটা বছর পঁয়তাল্লিশ এর শ্যামবরনী স্বাতী। ইনি আমাদের পার্লারের নিয়মিত সুন্দরী। যেদিনই আসেন, মালকিন এর মুখের হাসি দুই ইঞ্চি থেকে আড়াই ইঞ্চি হয়ে যায়। কেন আর বলে দিতে হবে না বোধ হয়। অত অত নোট হাতে পেলে আমিও ওরকম খুশি হতাম! আজকে ইনি ব্যস্ত নিজের চুলের রঙ করতে। সারা মাথায় কালো গোবরের মত মেহেন্দি গোলা মাখিয়ে দিচ্ছে প্রতিমা। এই সময়টা সাধারনতঃ বেশিরভাগ মেয়ে চোখ বুজে একটু ঘুমিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু স্বাতী গভীর সমস্যায় পড়েছেন। কারণ মেহেন্দি করার কথা তিনি কালকে জানিয়ে গেছিলেন। আজ আসার পর থেকে মালকিন এবং প্রতিমা- মঞ্জুরা [অবশ্যি মালকিন আগে থেকে শিখিয়ে দিয়েছিলেন বলে ]সবাই মিলে তাঁকে বলে যাচ্ছিল যে তাঁর উচিত মেহেন্দি না করে বাজারের নতুন আমদানি বার্গান্ডি রংটা লাগানো। এটাই এ বছর বেশি চলছে। তাও তিনি সিদ্ধান্ত নেন যে মেহেন্দিই লাগাবেন। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে যে ঐ রংটা লাগানোই ভালো ছিল। বিশেষ করে যখন থেকে শুনেছেন মিসেস ব্যানার্জীও ওই রঙ লাগিয়েছেন তাঁর চুলে আর তাঁকে না জানি কি অসাধারন দেখতে লাগছে...ইশ্‌, খুব ভুল হয়ে গেল...এইসব ভেবে তিনি প্রতিমাকে নানা রকম প্রশ্ন করে যাচ্ছেন- এখন কি মেহেন্দি ধুয়ে ফেলে ওই রঙ লাগানো যাবে...

...না , যাবে না, আগামি দুই তিন মাস চুলে অন্য কোন রঙ লাগানো যাবে না, কারন মেহেন্দির ওপর কোন রঙ ধরবে না...

...এমা...এটা খুব খারাপ লাগছে না? ওটা করলেই হত...

...হ্যাঁ, আপনাকে তো আগেই বলেছিলাম...

ওরে বাবা! আমার আপাততঃ হাই উঠছে; এর হয়ে গেল! আজ কেন, এই পুরো পুজোটা বেচারি আর শান্তিতে কাটাতে পারবে না। মাথায় ঘুরবে মিসেস ব্যানার্জীর বার্গান্ডী চুল!

আমি অন্যদিকে চোখ ফেরাই। পেছনদিকের বেঞ্চে একজন বছর ছত্রিশ-সাঁইত্রিশের ফরসা, চুপচাপ মহিলা বসে আছেন। ইনি ইন্দ্রানী। ইনিও মোটামুটি নিয়মিত। খুব একটা হেলদোল নেই, বোঝায় যাচ্ছে কি করাবেন সেই বিষয়ে খুব নিশ্চিত। তার পাশে একটু আগে ঢুকেছেন আরেকজন - চোখে চশমা, পরনে সালোয়ার কামিজ, ওই ত্রিশ থেকে পঁয়ত্রিশের মধ্যে। ইনি নতুন মুখ। আগে দেখেছি বলে মনে পড়ছে না। দুজনেই ভাবলেশহীন মুখে ,পরম ধৈর্য সহকারে [মানে মনে মনে যথেষ্ট মুন্ডপাত করে ]স্বাতীর ঘ্যানঘ্যানানি শুনছেন। ওদিকের চেয়ারে এতক্ষন বসেছিল কলেজ পড়ুয়া সুমনা। ও আজকে ফেশিয়াল করবে। কিন্তু আমাদের ফেশিয়াল মাস্টার প্রতিমা এখনও স্বাতী এবং মেহেন্দী নিয়ে ব্যস্ত। তাই সুমনা ব্যাগ রেখে বিরক্ত মুখেবেরিয়ে গেল- কাছে পিঠে ঘুরে ফেরত আসবে।

সুমনা উঠে যেতেই ইন্দ্রানীকে ডেকে নিল মঞ্জু। ইন্দ্রানী ভ্রু প্লাক করাবেন। শান্ত, নিচু গলায় কথাটা বলে নিজেকে মঞ্জুর  আঙ্গুল এবং দাঁতের ফাঁকে আটকে থাকা সরু সুতোর হাতে ছেড়ে দিলেন। ইতিমধ্যে ইন্দ্রানী পাশে গিয়ে বসায়, স্বাতী সাময়িকভাবে নিজের চুলের রঙের দুঃখ ভুলে ইন্দ্রানীর উজ্জ্বল ত্বকের প্রসংশায় মেতে উঠলেন। যাক বাবা, খানিক্ষন স্বাদবদল! কান একেবারে পচে গিয়েছিল গত আধঘন্টায়!

সবিতা মাত্র কিছুক্ষন আগে একজনের চুল কেটে কিছুক্ষণের জন্য ব্রেক নিয়েছিল। এবার ফিরে এসে পেছনে বসে থাকা সালোয়ার-কামিজ কে ডেকে নিল। সালোয়ার-কামিজ চুল কাটবেন। বিশেষ কোন কায়দা নয়, শুধুমাত্র ট্রিমিং। নতুন মুখ দেখে মালকিন পেছনে এসে দাঁড়ালেন। দাঁড়াতেই হবে - নতুন খদ্দের, যত বেশি নানারকম বুঝিয়ে পরীক্ষা-নিরিক্ষা চালিয়ে বিল বাড়ানো যায় আর কি !

কিন্তু ইনি দেখা যাচ্ছে সহজে ভাংছেন না। ফেশিয়াল-প্লাকিং- ম্যাসাজ-মেহেন্দী- চুল রঙ, কিছুই করবেন না। নিতান্তই ট্রিমিং, মানে পুরো একশো টাকাও বিল হবে না! আহারে মালকিন! মুখটা দেখে আমার বেশ হাসি পাচ্ছে।

কপালে অবশ্য সুখ সইল না! দরজা ঠেলে ঢুকলেন মিঠু। ইনি আমাদের আরেক নিয়মিত সুন্দরী। রোগা, খিশকুটে চেহারা, হলরবলর করে কথা বলেন, গাদা গাদা টাকা খরচা করে মুখের দাগ তোলার চেষ্টা করেন [জন্মেও উঠবে না- বসন্তের দাগ তোলা যদি অতই সহজ হত! ] আর স্বাতীর সঙ্গে সবসময় অদৃশ্য লড়াইএ ব্যস্ত থাকেন -দুজনে পড়শি কিনা! একই আবাসনের বিভিন্ন দিকে থাকেন ]। কি করে যেন বেশিরভাগ দিন, এরা দুজন, একজন পার্লারে এলেই, অন্যজনও এসে উপস্থিত হবেন। নির্ঘাত জানলায় দাঁড়িয়ে নজরদারি করেন সারাদিন!

যাইহোক, আপাতত মিঠু দেওয়ালের দিকে রাখা সরু বিছানাটির ওপর আধশোয়া হয়ে পড়েছেন - ইনি আজ শুধু বাজে বকতে এসেছেন নাকি মালকিনের পকেট ভারি করতেও চান, এখনো ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। প্রচন্ড রকম ভাঙ্গা গলায় মিঠু নিজের রান্নার মেয়ের গুনগান করছেন। মেয়েটি অসাধারন রাঁধে [চুল ও বাঁধে আশাকরি ], গতরাতে যা মাংস রেঁধেছিল ভাবা যায়না, আজকে দশ জন গেস্ট এর জন্য রান্না করছে- এরকম মেয়ে লাখে একটা মেলে...এইরে! স্বাতীর আর সইল না! আর সহ্য হয় এতক্ষন ধরে? - কাজেই এবার স্বাতীর পাঁচালি শুরু হল - তার রান্নার মেয়েটি বড় বড় হোটেলের শেফ দের হার মানায়- যা ইলিশ মাছ রাঁধে, আর যা পোলাও রাঁধে...এই তো আর সাতদিন পরে স্টেটস্‌ থেকে স্বাতীর দেওররা আসবে পুজো দেখতে, ওই তো সব রান্না করবে...গতমাসে লন্ডন থেকে ভাইপোরা এসেছিল, তারা তো ওর রান্না খেয়ে মুগ্ধ...

আপাতত আমাদের পার্লারে প্রতিমা-মঞ্জু-সবিতার হাত চলছে নিয়মমত, দুইজন সুন্দরীর জোর গলায় মতামত আদান-প্রদান চলছে আমাদের অচেনা দুইজন মেয়ের রান্নার হাতের ক্ষমতা নিয়ে, মালকিনের হাত নোট গোণায় ব্যস্ত,মধ্যিখান থেকে কথাবার্তা কি করে যেন ঘুরে গিয়ে রান্নার মেয়ে থেকে নিজে নিজে রান্না করা, এবং বিদেশে কিরকম সব কাজ নিজেই নিজেকে করতে হয় সেইদিকে ঘুরে গেছে, তার ফলে মালকিন সুযোগ পেয়ে তার দাদা যে সুইডেনে থাকেন আর দেওর যে কানাডা তে থাকেন সেটা সবাইকে জানিয়ে দিয়েছেন...

***********************************

নটা বাজলো। এবার আজকের মত আমাদের ঝাঁপ বন্ধ করার পালা। অন্য সময়ে আটটায় বন্ধ হয়ে যায়।  কিন্তু এখন সামনে পুজো। তাই বেশি সময় খোলা রাখতে হচ্ছে। আমার সামনের চেয়ারে পা ঝুলিয়ে একটি ছোট্ট মেয়ে বসে আছে। তার চুল কেটে দিচ্ছে সবিতা। পেছনে মেয়ের মা ঝিমধরা ক্লান্ত মুখে বসে আছেন। পাশে গোটা দুয়েক শপিং ব্যাগ। বোঝাই যাচ্ছে, মেয়েকে নিয়ে সারাদিন নতুন জামাকাপড় কিনে শেষপথে এইখানে এসেছেন। এরাই আজকের শেষ খদ্দের, থুড়ি, শেষ ছোট্ট সুন্দরী এবং তার সুন্দরী মা।

মা- মেয়ে বেরিয়ে যেতে বাড়ী ফেরার জন্য তৈরি হতে লাগলো দিনভর খাটুনিতে ক্লান্ত প্রতিমা-মঞ্জু-সবিতা। মালকিন অনেক আগেই বেরিয়ে গেছেন। প্রতিমা সব কৌটো-বাক্স-যন্ত্রপাতি  গুছিয়ে তুলে রাখছে ঠিকঠাক জায়গায়। টাকা-পয়সা হিসাব করে গুনে তুলে নিচ্ছে মঞ্জু। যাওয়ার পথে মালকিনকে হিসাব এবং চাবি দিয়ে যেতে হবে। তিনজন তিনদিকে যাবে - সোনারপুর-মাঝেরহাট-উল্টোডাঙ্গা। এখান থেকে বেরিয়ে হেঁটে বালিগঞ্জ স্টেশন, তারপর যে যার ট্রেন। যাওয়ার পথে মনে হলে ফুটপাথের দোকান থেকে টুকটাক কেনাকাটা। বাড়ি ফিরে রান্না-খাওয়া-ঝগড়া-সমস্যা-সমাধান-ঘুম, আবার পরের দিন সকাল দশটার মধ্যে এসে দরজা খোলা।

ব্যস্ত হাতে চুল আঁচড়ে নিতে নিতে আমার সামনে এসে দাঁড়ালো সবিতা। নিজেকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখতে লাগলো। তারপর ব্যাগ খুলে টিপের পাতা বের করে একটা ছোট্ট টিপ পড়লো, মুখের ঘাম মুছলো। তারপর আমার দিকে তাকিয়ে, রোজকার মত মুচকি হেসে বললো-

"জাদু-আয়না, বলতো দেখি সবথেকে সুন্দরী কে?"