ভাগ্যিস ফেসবুক ছিল - নইলে কি আর নিবেদিতা লেখার জন্য এমন বিষয় ভাবতো ! তবে কিনা ফেসবুক থাকার ফলে কী কী হয়েছে আর কী কী হয়নি, সেটার তালিকা তো বেজায় দীর্ঘ, আর সেসব কথা লিখলে কিনা একটা আস্ত অভিধান মাফিক বই হয়ে যাবে, তাই জায়গার, ধৈর্য্যের এবং সময়ের অভাবে, সব কিছু না লিখে মোটে দুটো বিষয় নিয়ে লিখব।
হ্যাঁ ভাগ্যিস ফেসবুক ছিল- নইলে আমি যে কত কম জানি, মানে প্রায় কোনোও বিষয়েই কিছুই জানি না, আর বাকি সব্বাই কত্ত  কত্ত জানে, এটা জানতেই পারতাম না! এত জানাজানি থাকলে তার সঙ্গে সঙ্গে সেখানে যে কানাকানিও আসবে এ তো বলাই বাহুল্য, কারণ আমরা ছোট থেকে শিখে এসেছি, ভালো জিনিষ সবার সঙ্গে ভাগ করে নিতে হয়। তা ফেসবুকে কানাকানিও ব্যাপক হারে হয়। মানে , মনে করুন আপনি একখানা পোস্ট কিংবা কমেন্ট করে ফেলেছেন, যেটা কিছু সংখ্যক জনগণের ( পড়ুন ফ্রেন্ডস্‌ অফ ফ্রেন্ডস্‌) পছন্দ হয়নি, অমনি তাঁরা ট্রিভাগো ম্যানের স্টাইলে কানাকানি করে সমমনস্ক লোকজনদের খবর পাঠিয়ে দেবেন – এই এই দেখে যাও, এখানে এই পাবলিক কী লিখেছে ! চলো, গণ উদ্যোগে একে ট্রোল করি, কিছু করে দেখাই !
তা, জানাজানি থেকে কানাকানি যখন হল, তাহলে লজিক্যালি হানাহানিও হওয়া উচিত। ফেসবুকে সেটাও নিয়মিত হারে হয়। সেইসব কানাকানিসূত্রে একত্র হওয়া লোকজন, দশদিক থেকে ছুটে এসে আপনাকে বেজায় ভার্চুয়াল গণপিটুনি দেবেন। অবশ্য আপনার তাতে হতাশ হওয়ার কিছু নেই, আপনার ভাগ্য ভালো হলে আপনি নিজের দলেও এরকম সেলফ ডেডিকেটেড সমর্থনকারী পেয়ে যাবেন। দেখবেন আপনার পোস্ট/ কমেন্ট-এর নিচে কীরকম রাম রাবণের যুদ্ধ হচ্ছে। আপনি যথেষ্ট বুদ্ধিমন্ত এবং শান্তিপ্রিয় হলে ওই সময়টায় , নিজের কমেন্ট থ্রেডে এক্কেরে স্পিক্টিনট হয়ে থাকবেন, এবং ভার্চুয়াল ছেড়ে রিয়েলে ফিরে বিগবাস্কেটে মাসকাবারি বাজারটা সেরে ফেলতে পারবেন। 
তবে হ্যাঁ, শুধু এরকম সব ঝড়-ঝঞ্ঝ্বাপূর্ণ ব্যাপার-স্যাপার না, ফেসবুকে কিছু ভালো ভালো ব্যাপারও ঘটে। এই যেমন সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠেই আপনি দেখতে পারেন,সম্পূর্ণ অচেনা মানুষজন আপনাকে 'ফ্রাআআন্ডজ্‌ রিকোয়েস্ট' পাঠিয়েছেন। কেন, সেটা বলা বেশিরভাগ সময়েই বেশ মুশকিল, কারণ তাঁদের মধ্যে ৯৯.৯% আপনাকে বন্ধ্বুত্বের আবেদন জানানোর সময়ে আপনার এহেন সৌভাগ্যের কারণ জানাবেন না। পুরো ব্যাপারটাই মূলতঃ অন্যেরা করেছে/ করছে /করতে চলেছে, অগত্যা আমারও করে ফেলা উচিত-গোছের অনুশীলনের ওপর নির্ভরশীল। এইরকম নিদারুণ অভিজ্ঞতার সম্মুখীন কম-বেশী সবাই হয়েছে। জেনে রাখবেন, এ হল হল নব্য-বন্ধুতার তত্ব (Theories of Neo- Friendship) এবং বন্ধুত্বের জুকার্বার্গীয় সূত্রগুলি (Zuckerberg's Laws of Friendship)- এর প্র্যাক্টিক্যাল এক্সপেরিমেন্টেশন এর ফল।
এবারের মত 'জা-কা-হা' তত্ব এবং নব্য-বন্ধুতার তত্ব অবধিই আলোচনাটুকু রইল। ভবিষ্যতে নিবেদিতা আবার সুযোগ দিলে বাকি তত্বগুলি নিয়ে আলোচনা করা যাবে।

ফেসবুক প্রকাশঃ https://www.facebook.com/photo.php?fbid=1226251647509693&set=a.1226248024176722.1073741869.100003746095598&type=3&theater