• নকশি খাতা । The Embellished Notebook
  • অবতরণিকা । Introduction
  • বাংলা লেখালিখি
    • হাইকু
    • লিমেরিক
    • ছড়া।কবিতা
    • অণুগল্প
    • গল্প
    • প্রবন্ধ
    • অনুধ্যান
    • রম্যরচনা
    • পাঁচমিশালি
    • এই সময়, এই জীবন
    • সিনেমা দেখার পরে
  • জাল ছেঁকে যা পেলাম
  • Writings in English
    • Travel Diaries
    • Haiku
    • Recollections
    • Film Reviews
    • Book Reviews
    • Life and Times
    • Ruminations
  • অনুবাদ । Translations
  • Things I found on the Internet
  • ইচ্ছামতী থেকে ওয়েবলিংকগুলি
    • Editorials/ সম্পাদকীয়
  • নকশি খাতা । The Embellished Notebook
  • অবতরণিকা । Introduction
  • বাংলা লেখালিখি
    • হাইকু
    • লিমেরিক
    • ছড়া।কবিতা
    • অণুগল্প
    • গল্প
    • প্রবন্ধ
    • অনুধ্যান
    • রম্যরচনা
    • পাঁচমিশালি
    • এই সময়, এই জীবন
    • সিনেমা দেখার পরে
  • জাল ছেঁকে যা পেলাম
  • Writings in English
    • Travel Diaries
    • Haiku
    • Recollections
    • Film Reviews
    • Book Reviews
    • Life and Times
    • Ruminations
  • অনুবাদ । Translations
  • Things I found on the Internet
  • ইচ্ছামতী থেকে ওয়েবলিংকগুলি
    • Editorials/ সম্পাদকীয়
মহাশ্বেতা রায়
Mahasweta Ray

বাসী খিচুড়ি

সেই বসন্তোৎসব

Details
Published: 24 March 2022

তখন আমি ক্লাস টু। বোধ হয় সদ্য ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হয়ে নতুন ক্লাসে ওঠার অপেক্ষায় বা উঠেছি, পড়াশোনার তেমন চাপ নেই। আমাদের ব্লকের পেছনের ব্লকের একতলাতেই একটা কোয়ার্টারে 'ছন্দম' এর ক্লাস হয় - নাচ এবং গানের। সেই স্কুলের প্রধান বিমলকাকুই সম্ভবতঃ উদ্যোগটা নিয়েছিলেন --- পাড়াতে হবে বসন্তোৎসব।

  • বাসী খিচুড়ি

Read more …

সিপিয়া দিনকালের আলপনা

Details
Published: 19 December 2021

সেই সব সিপিয়া দিনকালে, চৈত্র-বৈশাখে নিয়ম মেনে কয়েকদিন পরে পরেই অবিকল মোহিতলাল মজুমদারের বিখ্যাত কবিতাটার বিবরণ অক্ষরে অক্ষরে মিলিয়েই কালবৈশাখী হত। তাই এই বৈশাখী বিয়েতেও যে বৃষ্টি হবেই, এটাও ধরে নেওয়া হয়েছিল। বাগানের মাটি ঘাস ছেঁটে , সমান করে বিয়ের জায়গা তৈরি হবে এটা তো স্থির। কিন্তু যতই ভালো করে প্যান্ডেল বানানো হোক, এপাশ-ওপাশ থেকে জল গড়িয়ে এসে মাটি তো ভিজবেই। মুছে যাবে বিয়ের আসরের আল্‌পনা। তাহলে উপায়?

  • বাসী খিচুড়ি

Read more …

লক্ষ্মীপুজোর আর্গোনমিক আলপনা

Details
Published: 20 October 2021

আমাদের সেই চন্দননগরের শেঠ লেনের বাড়ির একতলা থেকে দোতলায় যাওয়ার সিঁড়িগুলো ছিল আজকের দিনের যেকোনো বাড়ির তুওনায় বেশ লম্বা চওড়া। আর একেবারে গোটা কুড়ি ( একটু কম বেশি হতে পারে) সিঁড়ি উঠে সোজা দোতলায় পৌঁছে যাওয়া যেত,মাঝপথে কোনো দেড়তলায় খানিক জিরিয়ে সেই সিঁড়ি ঘুরে দোতলায় উঠত না। লক্ষ্মী পুজোর দিনে সেই সিঁড়িগুলিতে মা লক্ষ্মীর পায়ের ছবি আঁকার দায়িত্ব পড়ত আমার আর মণিপিসির ওপর। জ্ঞান হয়ে থেকে মোটামুটি ক্লাস ফাইভ অবধি এই কাজ করেছি, তাই বলাই বাহুল্য, আসলে বেশিরভাগ কাজটা করত আমার থেকে বছর পাঁচেকের বড় মণিপিসি, আমি সঙ্গে হাত মেলাতাম।

  • বাসী খিচুড়ি

Read more …

ছোটদাদুর দোকান

Details
Published: 14 October 2021

আমাদের ছোটদাদুর, মানে বাবার ছোটকাকার একটা জুতোর দোকান ছিল। চন্দননগর বাবুরবাজার মোড়ের একেবারে ওপরে- 'তারা মা শু স্টোর্স'। দাদু দিনে অফিস করতেন, আর সন্ধ্যাবেলায় খুলতেন জুতোর দোকান। আর ছুটির দিনে দুইবেলাই খুলত সেই দোকান। এটা অবশ্য আমি আন্দাজে লিখলাম, কারণ আমরা তো ছুটিতেই বেড়াতে যেতাম, তখন তো দুইবেলাই দোকান খোলা থাকতে দেখেছি। আর দোকানে কোনো কর্মচারী ছিল না বলেই আমার মনে পড়ে, তাই কাজের দিনে বোধহয় সকালে দোকান বন্ধই থাকত । সেই দোকানের ক্যালেন্ডারে অবধারিত ভাবেই তারা মায়ের ছবি থাকত। 'তারা মা শু স্টোর্স'-এর ঠিক পেছনেই হত বাবুরবাজারের ঠাকুরপুজোর বিরাট মন্ডপ। তাই পুজোর ক'দিন, ওদিকে গেলে একবার দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে আসা, ভেতরে বসে দু-দন্ড জিরিয়ে নেওয়ার অভ্যাস ছিল আমাদের। আর পুজোর সময়ের নতুন জুতো আমরা পেতাম ছোটদাদুর থেকে। এই অভ্যাসটা মোটামুটি ক্লাস ফাইভ অবধি অব্যাহত ছিল।

  • বাসী খিচুড়ি

Read more …

এসে গ্যাচে, এসে গ্যাচে

Details
Published: 11 October 2021

দুপুর আড়াইটা কি তিনটে বা হয়ত সাড়ে তিনটে... মানকুন্ডু স্টেশনে থেকে খানিক সুরকি ফেলা, খানিক ইঁট পাতা, খানিক পাথর কুচি বেরোনো রাস্তা ধরে, নিঝুম পাড়ার মধ্যে দিয়ে চলেছে একটা রিকশা। ক্যাঁচ কোঁচ, ক্যাঁচ কোঁচ। রাস্তার দুইপাশে একতলা দোতলা গৃহস্থের বাড়ি। বেশিরভাগ বাড়ি ঘিরে সবুজ বেড়া ঘেরা বাগান, বাগানের বড় বড় গাছপালায় ছায়া ছায়া হয়ে আছে পথ। দুপুরের রোদ সরাসরি গায়ে লাগছে না। রিকশায় আসনে বসে বাবা আর মা। বাবার কোলে আমি,মায়ের কোলে ভাই। সঙ্গে একটা সবুজ কম্বল জড়ানো ধাতব ওয়াটার বটল, একটা লাল চামড়ার কীট ব্যাগ, আরও একটা সুটকেস বা অন্য ব্যাগ। এপথ সেপথ ঘুরে মিনিট দশ-পনেরো পরে সে রিকশা এসে থামল একটা বাড়ির সামনে।

  • বাসী খিচুড়ি

Read more …

বিশ্বকর্মা পুজো

Details
Published: 17 September 2021

আজ বিশ্বকর্মা পুজো। কিন্তু কেমন বোকার মত ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি পড়ছে। এমন হলে মানুষ ঘুড়ি ওড়াবে কেমন করে?

ওয়ান্স আপন আ টাইম, লং লং এগো, এক বিশ্বকর্মা পুজোর সকালে আমাদের ছোট পিসেমশাইয়ের সঙ্গে আমরা হিন্দুস্থান কেব্‌ল্‌স্‌ কারখানার বিশ্বকর্মা পুজো দেখতে গেছিলাম। বাবা, মা, বড় পিসেমশাই-এর এক্তিয়ারে স্কুল। সেখানে সরস্বতী পুজোর দিন আমাদের অবাধ গতি। কারখানা শুধুই ছোট পিসেমশাই-এর এক্তিয়ার। তবে কারখানা ভ্রমণ জীবনে ওই একবারই হয়েছিল।

Read more …

মনের মত অস্ত্র

Details
Published: 24 August 2021

কলকাতায় কলেজে পড়ি। ছুটি পড়লে তুফান মেল চেপে বাড়ি যাই, আর ফেরার দিনের নির্দিষ্ট ট্রেন হল কোলফিল্ড এক্সপ্রেস, যাকে ধরতে হয় বাড়ি থেকে অন্ততঃ পঁয়তাল্লিশ মিনিট - প্রথমে হাঁটা, তারপরে বাস, তারপরে রিকশা চেপে সীতারামপুর জংশনে পৌঁছে। সকাল ছ'টা পঞ্চাশের গাড়ি ধরতে ভোর পাঁচটার ও আগে বাড়ি থেকে বেরোও! হাতে সময় নিয়ে, কারণ 'কোলফিল্ড' ধরানোর বাস যদি চলে যায়, তাহলে অগতির গতি পরের মিনিবাসের ভরসায় থাকতে হবে। কিংবা নিয়ামতপুরে বাস থেকে নেমেই তুমি স্টেশন যাওয়ার রিকশা তাড়াতাড়ি নাও পেতে পারো।

  • বাসী খিচুড়ি

Read more …

ছবি তোলা আর সীগালের পাল

Details
Published: 12 June 2021

ছবি তোলা আর সীগালের পাল

ডিজিটাল ক্যামেরার আনন্দ বা দুঃখ, যাই বলা হোক, সেটা এই যে, মোটামুটি সোজা আর স্থির করে ধরে রাখতে পারলে, আর আলো ভালো থাকলে, বেশিরভাগ ছবিই দিব্যি উৎরে যায়। তার জন্য আলাদা করে আর ধৈর্য্য ধরে সঠিক মূহুর্তের জন্য অপেক্ষা করতে হয় না। সঙ্গে ফিল্ম খরচের চাপ নেই, খচাখচ তোলো, পছন্দ না হলে ফটাফট ডিলিট, তারপরে ডিজিটাল মেমরিতে রেখে ভুলে যাও। তাই আমিও দিব্যি বড়সড় এক ক্যামেরা বাগিয়ে বেনারসের ঘাটে ঘাটে এদিক ওদিক খচাখচ শাটার টিপতে লাগলাম।

  • বাসী খিচুড়ি

Read more …

পেরিয়ারের জঙ্গলে

Details
Published: 06 June 2021

পেরিয়ারের জঙ্গলে

অগাস্ট মাসের তৃতীয় সপ্তাহে , প্রখর রোদে ওইরকম ভয়ানক হাঁটাহাঁটি করে গায়ের চামড়া লাল হয়ে গেছিল আর হাত-পায়ের জোড় সব খুলে গেছিল। মাঝে লেকের জলে ওই বাঁশের ভেলা চেপে যাওয়া আর ফেরার সময়েই বেশি আনন্দ পেয়েছিলাম। ভেলার ওপর বাঁশের সীটে পাশ ফিরে বসে জলে পা ডুবিয়ে দিয়েছিলাম, সর সর করে জল সরে যাচ্ছিল, অদ্ভূত আরাম লাগছিল।

  • বাসী খিচুড়ি

Read more …

স্মৃতির আচার, আচারের স্মৃতি

Details
Published: 29 January 2020

আমার বেড়ে ওঠার শিল্পশহর হিন্দুস্থান কেবল্‌স্‌-এ, আমাদের দোতলা , এবং পরে কিছু তিনতলা কোয়ার্টারের একতলার বাসিন্দাদের মধ্যে বেশিরভাগই কোয়ার্টারের সামনে বাগান করতেন। খুব শৌখিন মরসুমি ফুল থেকে শুরু করে একেবারেই ন্যাড়া, মূলতঃ জামাকাপড় শুকাতে দেওয়া, সাইকেল/ গাড়ি রাখার জন্যই ঘিরে রাখা- এমন নানা ধরনের বাগান ছিল। . একটি একতলা কোয়ার্টারের বাসিন্দা হওয়ার সুবাদে আমাদের ও একখানি নানারকমের গাছপালা ভরা বাগান ছিল। আর আমাদের ঠিক মুখোমুখি দরজার মামা-মামীদের ও একখানা বাগান ছিল। মামা-মামী মানে শ্রী চিত্তরঞ্জন মুখার্জি আর শ্রীমতী সর্বানী মুখার্জি। চিত্তমামা বাবার সহকর্মী, আমার মায়ের চাকরি-সম্পর্ক্তুতো দাদা, তাই আমাদের মামা। মায়ের পিতৃকুলের পদবী মুখোপাধ্যায়, আর দুইজনে কাছাকাছি সময়ে নাকি হিন্দুস্থান কেবল্‌স্‌ এর স্কুলে কাজে যোগ দিয়েছিলেন, তাই সেসময় আশেপাশের লোকজন ফর্সা ফর্সা চেহারার চিত্তরঞ্জন মুখার্জি স্যার আর চন্দনা মুখার্জি দিদিমণিকে নাকি ভাই-বোন ঠাউরেছিলেন-এমন কথা মায়ের কাছে শোনা।

  • বাসী খিচুড়ি

Read more …

বাসী খিচুড়িঃপর্ব ০১ঃচা

Details
Published: 01 September 2019

বিকেল সাড়ে চারটে বা পাঁচটা বাজে। কিংবা সাড়ে পাঁচটা। পশ্চিমের সবুজ খড়খড়ি আর চারকোনা মোটা শিকের জানলা দিয়ে এসে, লাল ফাটাফুটি মেঝেতে লুটোপুটি খাচ্ছে শেষ বিকেলের সূর্যের আলো। একটু নরম, একটু মনমরা। মেঝের এক কোণে, বাসন রাখার ছোট তাকের পাশে বসে সাদা, চেক চেক ছাপ, ফুল ছাপ বিভিন্ন রকমের কাপে চা ঢালছেন দিদু। কেটলি থেকেই মনে হয়, এখন আর মনে পড়ে না চা কেটলিতে তৈরি হত নাকি সসপ্যানে। সদ্য নেভানো জনতা স্টোভের কেরোসিন পোড়া ধোঁয়ার সাথে মিশে যাচ্ছে সদ্য ঢালা চায়ের আমেজ মেশানো ধোঁয়া। দিদুর সামনে গোল হয়ে বসে বাড়ির সদস্যেরা। দাদুকে ঘরে গিয়ে কেউ চা দিয়ে এসেছে।

  • ব্যক্তিগত গদ্য
  • বাসী খিচুড়ি

Read more …

হারিয়ে যাওয়া বাগান গুলি

Details
Published: 14 June 2011

হাওড়া -ব্যান্ডেল মেইন লাইনে মানকুন্ডুতে আমাদের একটা বাড়ি ছিল। আজ থেকে প্রায় বছর তিরিশেক আগে, সেখানে থাকতেন আমার ঠাকুরদা-ঠাকুমা ( আমাদের কাছে দাদু-দিদু), আমার দুই কাকা, তিন পিসি। আরো থাকতেন আমাদের ছোটদাদু-ছোটদিদু ( আমার বাবার কাকা-কাকিমা) আর তাঁদের ছেলে আর মেয়ে, আমাদের মণিকাকু আর মণিপিসি। থাকতেন আমার আরেক কাকা-কাকিমা, তাঁদের দুই ছেলে নিয়ে। মোট কথা, প্রচুর লোক । কয়েক বছরের ব্যাবধানে পিসি-কাকুদের বিয়েও হয়ে গেল, ফলে বাড়িতে জনসংখ্যা কমে যাওয়া এবং বেড়ে যাওয়া দুই-ই হল। এই পোস্ট অবশ্য সেই বাড়ির লোকজনদের নিয়ে নয়।সেই বাড়ি সংলগ্ন একটা বাগান ছিল, সেই বাগান নিয়ে।আন্দাজমত বিঘেখানেক জমির সেই বাগানটা ছিল ছোট্ট 'আমি'র কাছে এক বিশাল রহস্যময়, কিন্তু ভাললাগার , ভালবাসার জায়গা। সারা বছর মুখিয়ে থাকতাম গরমের ছুটি আর পুজোর ছুটির জন্য - ছুটি পড়লেই ব্যাগ বাক্স গুছিয়ে দিন পনেরোর জন্য চলে আসা হত মানকুন্ডু। আমরা বলতাম চন্দননগরের বাড়ি;

  • বাসী খিচুড়ি

Read more …

সরস্বতীর অ্যালবাম

Details
Published: 20 January 2010

ছবি ১
ছোট্ট মেয়ে। বয়স পাঁচ বা ছয়। ঝকঝকে সকাল। একটা পুরোনো বাড়ির পাশের ইঁট বাঁধানো গলি। এককোনায় একটা লাল জনতা স্টোভের ওপর বসানো কালো হাঁড়ি। টগবগ করে জল ফুটছে। সামনে বসে দুই পিসি। ফুটন্ত জলের মধ্যে নেচে বেড়াচ্ছে শুকনো শিউলির বোঁটা। আর পাক খাচ্ছে একফালি লম্বাটে কাপড়ের টুকরো। মেয়েটা লাফাতে লাফাতে কাছে এলেই পিসিরা বলছে দূরে যাও, দূরে যাও… একটু পরে একটা লাঠির ডগায় জড়িয়ে বেড়িয়ে এল ফ্যাকাশে হলদেটে-কমলাটে রঙা সেই কাপড়ের ফালি। শিউলির বোঁটায় রাঙানো পুতুলের শাড়ি।



ছবি ২
সন্ধ্যাবেলা। দুই ভাই বোনের খুব ব্যস্ততা। কাল সরস্বতী পুজো। মায়ের আলপনা আঁকা হয়ে গেছে। বাবা বাজার থেকে নিয়ে এসেছেন মাটির দোয়াত, খাগের কলম। তবে মূর্তি নেই। মা বলেছেন ঠাকুরঘরের পটকেই পুজো করা হবে। একটু মন খারাপ…সবার বাড়ি মূর্তি আসে…কিন্তু কি আর করা…বাবা, মা দুজনেরই যে স্কুলের দায়িত্ব, তাই বাড়ির পুজো তাড়াতাড়ি শেষ করে স্কুলে যেতে হবে… আজ রাতে ঠাকুরের পায়ের কাছে সব বই রাখতে হবে যে…বিষয় মিলিয়ে সব বিষয়ের বই সাজায় দুইজনে। কোন বই ভুললেই মুশকিল! মা সরস্বতী আর সেই বিষয়ে কোন সাহায্য করবেন না !! বাবারে, এই ভুল করা যায় কখনো…বাবা যতই বলুন না কেন যে সব বই দেওয়ার দরকার নেই, সে কথা শুনছে কে?



ছবি ৩
সকাল থেকে খুব মন খারাপ। এতদিনের কুল না খেয়ে থাকা কোন কাজে লাগলো না আর। ঘুম থেকে উঠে, অঞ্জলি দেওয়া হয়নি, প্রসাদ খাওয়া হয়নি, মা সরস্বতীর কাছে ভালো করে প্রার্থনা করা হয়নি, আর চোখ কিনা সোজজা চলে গেল গতকালের খবরের কাগজের ওপর আর সে যে পড়ে ফেলেছে বড় বড় অক্ষরে লেখা প্রথম লাইন! এইবার কি হবে! কে না জানে যে সরস্বতী পুজোর দিন মোটেও পড়শোনা করতে নেই, অক্ষরের দিকে তাকাতেই নেই…কি যে হবে…মা সরস্বতী নির্ঘাত রেগে গেলেন একটু…



ছবি ৪
গোলাপি আর সাদা সালোয়ার কামিজ পরা বছর তেরোর মেয়েদুটি হাঁটছে বাস রাস্তার দিকে। স্কুলে যাচ্ছে স্কুলের পুজো দেখতে। আজ স্কুল বাস নেই। তাতে কি? আজকেই তো বড় হওয়ার দিন। ক্লাস সেভেন। এই প্রথম একলা একলা পাবলিক বাসে চেপে সরস্বতী পুজোর দিন স্কুলে যেতে দিতে রাজি হয়েছেন বাবা-মারা। তবে শাড়ি পড়ে বাসে উঠতে গিয়ে হোঁচট খেলে বা পড়ে গেলে কি হবে? তাই শাড়ির বদলে সালোয়ার কামিজ ই সই। স্কুলের গেটের সামনে এসে হাঁ ! সামনে কাতার দিয়ে সাইকেল, স্কুটার, মোটরসাইকেল আর অগুন্তি নানাবয়সী ছেলে !! নিজেদের স্কুলে নিজেরাই ঢোকা দায়। কোনমতে ঢুকে ঠাকুর দেখে, প্রসাদের প্যাকেট যোগাড় করে, ভীড়ে থতমত দুজনে। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দেখতে পাচ্ছে এদিক-ওদিক, প্রচুর সাজগোজ করা মেয়েরাও আছে, কিন্তু মেয়েদের স্কুলে একতলা, দোতলা, এমনকি ছাতেও- এত এত ছেলে? তাদের জামার কাট, চুলের ছাঁট, কপালের ওপরে তোলা সানগ্লাস- সবই তো খুব চেনা, কিন্তু চোখের দৃষ্টি, শরীরের ভঙ্গী-মাঝে মাঝে এত অচেনা লাগে কেন? অচেনা অনুভূতির হটাত ধাক্কায় কিছু ভয়, কিছু উত্তেজনা, কিছু গা শিরশির নিয়ে স্কুল থেকে বেরিয়ে আসে দুজনে। বড় হওয়ার রোমাঞ্চ যে বড় গোলমেলে…



ছবি ৫
ছেলেটা গেছে তার বন্ধুদের সাথে চাঁদা তুলতে সরস্বতী পুজো করবে বলে। সব ছেলেরা করে, তারাই বা বাদ কেন? তবে সঙ্গি-সাথী মোটে তিন-চারজন। তাতে কি? পাশের বাড়ি গিয়ে দরজায় ঠকঠক। জেঠু দরজা খুলে বললেন
-কি চাই?
-আমরা সরস্বতী পুজো করবো, চাঁদা চাই।
-কত চাঁদা?
-তোমার যা ইচ্ছা দাও।
চাঁদা আদায়কারি ছেলেটার এহেন দাবী শুনে হেসে উঠলেন জেঠু। বললেন -এভাবে চাইলে তো কম দেওয়া যাবে না। আচ্ছা যা দশ টাকা দিলাম।
সেই একবারই ছেলেটা পুজো নিয়ে উতসাহ দেখিয়েছিল। সেই দশটাকাটা ছিল সেবারের সব থেক বেশি চাঁদা।



ছবি ৬
বাবার খুব ফুল গাছের শখ। শীতে তাই বাগান ভরা বাসন্তী-কমলা গাঁদা, লাল-মেরুন- গোলাপি ডালিয়া, হলুদ, সাদা চন্দ্রমল্লিকা। আগুন রঙা বৈজয়ন্ত। ডালিয়া আর চন্দ্রমল্লিকারা টবে, কিন্তু গাঁদারা সবাই বাড়ি ঢোকার পথের পাশে কেয়ারি করা। তাই টবেরা সরস্বতী পুজোর আগের দিন বিকেলে ঢুকে গেল ঘেরা বারান্দার ভেতর। আর পরদিন সকালবেলা যা ভাবা গেছিল, তাই হল। হলুদ কমলায় সেজে থাকা উজ্জ্বল বাগানটা এক রাতের মধ্যে হয়ে পড়েছে রংহীন, জৌলুশহীন। ভোর রাতে দুষ্টু ছেলের দল সমস্ত ফুল তুলে নিয়ে গেছে যে!



ছবি ৭
মেয়েটা ক্লাস ইলেভেন। শাড়ী-টাড়ী পড়ে অন-নে-এ-ক বড়। স্কুল এর পুজোর সেক্রেটারি। ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে নিঃশ্বাস ফেলার যোগাড় নেই।বন্ধুদের উতসাহে এবং তার উদ্যোগে নিয়মের মাঝে একটু বদলের হাওয়া …এইবার প্রথম স্কুলের বিশাল হলের মেঝে জুড়ে সাবেকি সাদা আলপনার বদলে রঙিন বালির আলপনা। স্কুলের উঁচু ক্লাসের মেয়েরা তাই অফ পিরিয়ডে বসে বালি চালছে, তাতে আবির মেশাচ্ছে, আলাদা আলাদা রঙের বালি তৈরি হচ্ছে, আর ধীরে ধীরে স্কুলের হলের মাঝখানে ফুটে উঠছে রঙিন কার্পেটের মত বালির আলপনা। চারপাশে হাঁ মুখ নিচের ক্লাসের মেয়েদের ভীড়। বড় দিদিদের হাতের কাজ দেখছে অবাক চোখে। …পুজোর দিন বিশিষ্ট অতিথিদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন স্বয়ং বড়দিদিমণি !…সকলের প্রশংসা শুনে বাইরে এসে বন্ধুদের মধ্যে ছড়িয়ে যাচ্ছে খুশির আমেজ, সাফল্যের উত্তেজনা…আর রাশি রাশি ছেলেদের ভীড় দেখে সেই নাম-না-জানা-উত্তেজনা?- না…এখন আর সেই ভয়টা নেই, বরং এসেছে একটা দেখেও-দেখছি-না-বুঝেও-বুঝছি-না ভাব… !



ছবি ৮
পুজোর দুইদিন পরে স্কুলে খিচুড়ি খাওয়া। কোমরে আঁচল জড়িয়ে খিচুড়ির বালতি আর বেগুনির ঝুড়ি নিয়ে সার দিয়ে বসা মেয়েদের মাঝখান দিয়ে এপাশ থেকে ওপাশ যাচ্ছে কিছু মেয়ে। ভারি বালতি হলে সাহায্য করছেন মাস্টারমশাইরা। এ কদিন সবাই যেন সবার বন্ধু। স্যার বা দিদিমণিদের একয়দিন একটু কম ভয় পেলেও চলে।



ছবি ৯
উত্তর কলকাতার মেয়েদের কলেজ হোস্টেল। সকালে পুজো, দুপুরে খিচুড়ি, সন্ধ্যেবেলা অতিথি আপ্যায়ন (আশেপাশের ছেলেদের হোস্টেল থেকে ছেলেরা ) এবং অন্যান্য হোস্টেল পরিদর্শন (বিশেষ করে আশেপাশের ছেলেদের হোস্টেল গুলি )। এই একটা দিনই তো সব কিছুর ছাড়…কিছু চোখে চোখে কথা, কিছু ভদ্র আলাপচারিতা, আর অনেক না বলা তথা, না মেটা কৌতূহল…মেট্রনও প্রায় দেখেও না দেখার ভান করেন। পুজোর পরের দিন ভাসান দিয়ে এসে সারা রাত ধরে তিনরকমের ফিল্ম দেখা- বাংলা, হিন্দি আর ইংলিশ – যাতে কেউই অখুশি না হয়। সরস্বতীর ভাসান দিয়ে এসে সবাই নাকি ভাং খায়, আমরা খাবো না? নিশ্চয় খাবো- একদন সাহসিনীর ঘোষনা। একফোঁটাও খাবোনা, জানায় অন্য দল। প্রায় বন্ধ বাজার থেকে কিনে আনা হয় ভাং, আর গুঁড়ো পাউডার গুলে দুধ বানিয়ে, তাতে ভাং গুলে খাওয়া হয়। যারা খায় আর যারা খায়না- ফলাফল একই !! চল্লিশজন মেয়ের মোকাবিলা করতে পারে কি মোটে দুই-তিন মুঠো ভাং !!

ছবি ১০
পুজোর পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে মাটির দোয়াতে খাগের কলম ডুবিয়ে বেলপাতায় তিনবার করে লিখছে দুই ভাই বোন- শ্রী শ্রী সরস্বতৈ নমঃ। তারপর দধিকর্মা -দই-চিঁড়ে-ফল সব দিয়ে মেখে খেতে কি ভালো। মা বলছেন- মা সরস্বতীর পায়ের ফুল সব বইয়ের মধ্যে ঢুকিয়ে রাখো। আর আজকে সারাদিন খুব মন দিয়ে পড়াশোনা করতে হয়…
হোস্টেলে খাগের কলম দোয়াত আলাদা করে জোটে না, তাই খাতার পাতাই সই…শেষ দুপুরে সবার সাথে লরিতে উঠে গঙ্গার ঘাটে ভাসান দিতে গিয়ে যখন মূর্তিটা ধীরে ধীরে ডুবে যেতে লাগলো পড়ন্ত সূর্যের আলোয় চিকচিক করতে থাকা জলের তলায়, তখন দুচোখ ভরে শুধু জল…

  • বাসী খিচুড়ি

ফুলঝাড়ু…মাছ…কোয়ালিটি…

Details
Published: 30 November 2009

আমার মফস্বলী ছোটবেলার একটা নিয়মিত অভিজ্ঞতা ছিল ফেরিওয়ালারা। তাদের মধ্যে কেউ কেউ নিয়মিত আসতো, কেউ বা অনিয়মিত। পুরোনো কাপড়ের বদলে স্টিলের বাসন নিয়ে অবাঙ্গালী বাসনওয়ালি, মিশনের ধূপকাঠি নিয়ে বন্ধ হয়ে যাওয়া সাইকেল কারখানার সেই ভদ্রলোক যাঁর চশমার কাঁচটা খুব মোটা ছিল, জয়নগরের মোয়া, তিলের খাজা নিয়ে মরসুমি অচেনা মুখ, শীতকালে শালের বিশাল পোঁটলা পিঠে নিয়ে আপেলের মত গালওয়ালা চাপদাড়ি কাশ্মীরী ছেলের দল, সন্ধ্যেবেলা টং টং আওয়াজ করে দক্ষিনী দোসাওয়ালা…এছাড়া ছিল আরো কয়েকজন। তাদের ঠিক ফেরিওয়ালা বলা যাবে কিনা জানিনা, কারন তারা ছিল নিয়মিত যোগানদার, আর আমি তাদেরকে মোটামু্টি ঘরের লোক মনে করতাম। তাদের মধ্যে প্রথম ছিল হাজরাকাকু। হাজরাকাকুর নাম জানতাম না, এখনো জানিনা, বাবারা ওনাকে ‘হাজরা’ বলে ডাকতেন, তাই উনি আমাদের সবার হাজরাকাকু।

  • রম্যরচনা

Read more …

© Mahasweta Ray 2007 - 2025