NOT MY BUSINESS

-Niyi Osundare , Nigerian Poet.

They picked Akanni up one morning

Beat him soft like clay

And stuffed him down the belly

Of a waiting jeep.

What business of mine is it

So long they don’t take the yam

From my savouring mouth?

They came one night

Booted the whole house awake

And dragged Danladi out,

Then off to a lengthy absence.

What business of mine is it

So long they don’t take the yam

From my savouring mouth?

Chinwe went to work one day

Only to find her job was gone:

No query, no warning, no probe –

Just one neat sack for a stainless record.

What business of mine is it

So long they don’t take the yam

From my savouring mouth?

And then one evening

As I sat down to eat my yam

A knock on the door froze my hungry hand.

The jeep was waiting on my bewildered lawn

Waiting, waiting in its usual silence

নাইজেরিয় কবি নিইয়ি ওসুন্‌দারে'র এই কবিতাটি দুইবছর আগে আমি অনুবাদ করেছিলাম, প্রকাশিত হয়েছিল 'সই' এর 'এ নৈঃশব্দ্য আত্মঘাতী' সিরিজের অংশ হিসেবে।

আমার কী আসে যায়

--------------------------------------

এক সকালে ওরা রাখালকে তুলে

ওকে পেটাতে পেটাতে

অপেক্ষমান জীপটার ভেতরে ঠেসে

নিয়ে চলে গেল।

আমার কী আসে যায় তাতে

যতদিন আমার হেঁশেলে

দুধ-ভাত মজুত আছে?

ওরা এক রাতে এল

ভারি বুটের আওয়াজে সবার ঘুম ভাঙিয়ে

গোপালকে টেনে নিয়ে গেল

অনন্তকালের মত।

আমার কী আসে যায় তাতে

যতদিন আমার হেঁশেলে

দুধ-ভাত মজুত আছে?

লক্ষ্মী একদিন কাজে গিয়ে

ছাঁটাই নোটিস পেলো হাতে;

আগাম সতর্কতা কিংবা আলোচনাবিহীন

পুরস্কার - নিশ্চুপ কর্মনিপুণতার জন্য।

আমার কী আসে যায় তাতে

যতদিন আমার হেঁশেলে

দুধ-ভাত মজুত আছে?

কিন্তু তারপরে এক রাতে

সবে যখন বসেছি গরম দুধ-ভাতের বাটি নিয়ে

দরজায় একটা টোকা আমার হাতটাকে প্রাণহীন করে দিল।

আমার উদ্‌ভ্রান্ত উঠোনে দাঁড়িয়ে ছিল জীপটা

শিকারির পরিচিত নৈঃশব্দ্য নিয়ে।

বছর কুড়ি আগে, ফিল্ম স্টাডিজের ক্লাস করতে গিয়ে , সারা বিশ্বের সেরা সমস্ত কাহিনি এবং তথ্যচিত্র দেখতে দেখতে, পড়তে পড়তে, বুঝতে বুঝতে, একেক সময়ে দম বন্ধ হয়ে যেত। তখন ইন্টারনেট ছিল না, হাজারখানেক টিভি চ্যানেল ছিল না, আমি হোস্টেলে থাকতাম, তাই রোজ টিভি দেখার সুযোগ ছিল না, খবরের কাগজ নিয়মিত পড়ার অভ্যাস ছিল না, মূলতঃ বড়ই একমাত্রিক, সরলরৈখিক জীবন কাটাতাম। 'ফিল্ম স্টাডিজ'-এর দুই বছর নিঃসন্দেহে আমার জীবনে প্রয়োজনীয় বহুমাত্রিকতার যোগান দিয়েছিল।

সে সময়ে 'সুবর্ণরেখা' ছবির সেই বিশেষ দৃশ্য, যেখানে উদবাস্তু দুই বন্ধু, ঈশ্বর আর হরপ্রসাদ, কলকাতা শহরের বৈভব, প্রাচুর্য , আর আলো ঝলমল চেহারা দেখতে দেখতে অবাক হয়ে যান, আর মন্তব্য করেন, ‘ এরা যুদ্ধ দেখে নাই। মন্বন্তর দেখে নাই। দাঙ্গা দেখে নাই। দেশভাগ দেখে নাই।...' সেটা দেখতে দেখতে আমার খুব অস্বস্তি হত, লজ্জা হত মনে মনে। ক্লাসে সেই দৃশ্যের, সামগ্রিক ছবির আলোচনা করছেন সঞ্জয়দা, আর আমার মনে হত, ঠিকই তো, আমি তো কিছুই দেখিনি, নিরাপদে নির্বিবাদে শহরতলীর জীবন কাটিয়ে কলকাতায় কলেজে পড়তে চলে এসেছি। মা-বাবা মাসে মাসে টাকা পাঠান, আমি কলেজ পেরিয়ে ইউনিভার্সিটি আসি যাই, সিলেবাসের পড়াশোনা করি, আর ফাঁকে ফাঁকে হিন্দি ছবি দেখে, আড্ডা মেরে, প্রেম করে আর গড়িয়াহাটের ফুটপাথে জামা দরাদরি করে দিব্যি থাকি। আমার পূর্বপ্রজন্ম দেখেছেন, ফল ভুগেছেন বটে, খুব খুব কষ্ট করে এদেশের মাটিতে নিজেদের জায়গা করে নিতে পেরেছেন, ঈশ্বরী পাটনির মত খেটেখুটে আমাদের জন্য দুধ-ভাতের ব্যবস্থা করতে পেরেছেন; কিন্তু আমি তো সেসব কিছুই দেখিনি, কোনো কষ্টই করিনি। অনেক কিছুর সঙ্গে যুক্ত না থেকেও, অনেক কিছু না জেনেও, অনেক কিছু না বুঝেও নিজেকে কেমন যেন অপরাধী মনে হত। 'নাইট অ্যাণ্ড ফগ' -এর আতংক ছড়িয়ে গিয়েছিল শিরা-উপশিরায়। তবুও মনে মনে ভাবতাম, না না, দুটো বিশ্বযুদ্ধ যথেষ্ট ! মানুষ কি আর এত বোকা, এত জেদী, এত ধর্মান্ধ, এত রক্তপিপাসু হবে? যথেষ্ট শিক্ষা কি হয় নি? এমন যত অসম্ভব কারণে একে অপরের ক্ষতি করতে চাইবে? না, তেমন হতেই পারে না। হ্যাঁ, তার বছর ছয়েক আগেই বাবরি মসজিদ ভাঙা হয়ে গেছে। তার থেকেও বেশ কয়েক বছর আগে ইরাকের যুদ্ধে কেমন টার্গেট তাক করে স্কাড ছোঁড়া যায় , টিভির খবরে সেসব দেখেছি। আর ভারতীয় উপমহাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস, মূলধারার পাঠ্যবই আর সিনেমা-গল্প উপন্যাস মারফত অনেকটাই তো জানি। তবুও আমি নিতান্তই বোকার মত উলটো স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসতাম। বিশ্বাস করতাম, ইচ্ছে থাকলে, আন্তরিকভাবে গান গেয়ে আকাশ থেকে মন্ডা-মিঠাই-কাঁড়ি-কাঁড়ি আনিয়ে ফেলে, পেটের জ্বালায় অকারণ যুদ্ধে যাওয়া সৈন্যবাহিনিকে যুদ্ধ থেকে বিরত করা যায়, কিংবা কৃষক-মজুর-ছাত্রে মিলে দড়ি ধরে টান মেরে অপছন্দের রাজাকে খান খান করা যায়।

ইদানীং সেই জগৎ-দুনিয়া সম্পর্কে ধারণাহীন, ভালোর স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসা মেয়েটাকে আর সেই আলো-ছায়া-মেশা ক্লাসরুমটা , এই ছাতা-পড়া, ধোঁঁয়া ভরা মনে মাঝে মাঝেই দেখা দেয়। আর ঈশ্বর, হরপ্রসাদ আর ঋত্বিক ঘটকমশাইকে গলা ছেড়ে ডেকে বলতে ইচ্ছা করে ' ও স্যার, দেখে যান, আমরাও সব দেখছি ... আধুনিকতা, প্রযুক্তি আর উন্নতির চরম শিখরে উঠে পড়ে, টেলিস্কোপ এবং মাইক্রোস্কোপ, দুইয়েতেই সমানতালে চোখ রেখে, স-অ-ব দেখছি স্যার, বোধ হয় আপনারাও স্যার এত কিছু দেখেননি, বা কল্পনা করতে পারেন নি...না স্যার, লজ্জা, অস্বস্তি কিচ্ছু নেই, শুধু প্রচুর প্রচুর টাকা লাগিয়ে হিংসার চাষ করছি, ঘৃণা জমাচ্ছি আর ভয় কেনাবেচা করছি স্যার, একবার দেখে যান শুধু এসে... আর কেউ দেখতে পাক বা না পাক, কিন্তু আপনারা ঠিক দেখতে পাবেন স্যার, সুবর্ণরেখার পাশের সেই পরিত্যক্ত এয়ারফিল্ড থেকে হিংসা আর ঘেন্নায় ভরা দুঃস্বপ্নের উড়োজাহাজ ছাড়ছে, আর 'কোমলগান্ধার'-এর সেই চলতে চলতে থেমে যাওয়া রেলপথ...ওটাও খুলে গেছে, ওতে ভয় আর দুঃশ্চিন্তায় ভরা মালগাড়ি চলছে স্যার...আর সবগুলোই নিঃশব্দে এগিয়ে চলেছে কুয়াশায় মোড়া বরফঠাণ্ডা অশউইৎজের দিকে...একবার দেখে যান স্যার... ।'

(আজই মনে হল, হীরক রাজার মস্তিষ্ক প্রক্ষালন যন্ত্র আর অশউইৎজের ফটক- দুটোকে কেমন যেন একই রকম দেখতে। তাই পাশাপাশি ছবি দুটো শেয়ার করলাম। দুটো ছবিই গুগ্‌ল্‌ ইমেজ সার্চ মারফত পাওয়া)

Facebook Link:

https://www.facebook.com/mahasweta.ray/posts/10158364207267494