ঘোর বসন্তে হটাত করে বিদায় নিল এক যৌবনের দূত। সার্থক, সফল, উজ্জ্বল কপিরাইটার সিদ্ধার্থ। পেছনে ফেলে রেখে গেল অজস্র স্মৃতি। যে স্মৃতি অনবরত নাড়া দিয়ে চলেছে তিনটি মানুষকে। আরতি, সাহানা আর অর্নব। সম্পর্কের ত্রিমাত্রিক বহুভূজে, তিনটি বিন্দুতে দাঁড়িয়ে থাকা তিনটি মানুষ। সিদ্ধার্থের সাথে তাদের তিনজনের তিনরকমের সম্পর্ক।ব্যবহার করা বেডশীট, অ্যাকুয়ারিয়ামের রঙিন মাছ, ফ্রিজে পড়ে থাকা শেষ ডিম, অফিসের সফ্‌টবোর্ডে আটকানো ছবি, মোবাইলে মকশো করা চিঠি, ফেসবুকের মেসেজ, আর আরো অনেক টুকরো টুকরো স্মৃতির হাত ধরেই তারা চেনেন একে অপরকে, আর হয়ত আরেকবার নতুন করে চেনে্ন সিদ্ধার্থকে।সঞ্জয় নাগ নির্দেশিত ‘মেমরিজ ইন মার্চ’ এ মূল চরিত্রগুলিতে অভিনয় করেছেন দীপ্তি নাভাল, ঋতুপর্ন ঘোষ, রাইমা সেন। অনেকদিন পরে দীপ্তি নাভালকে পর্দায় দেখে খুব ভাল লাগল। অনেক সময় পেরিয়ে গেছে, কিন্তু তিনি আজও স্বকীয় ঔজ্জ্বল্যে ভরপুর। ক্যামেরার পেছন থেকে সামনে এসে ঋতুপর্ণ ঘোষ অভিনেতা রূপে আমাদের মুগ্ধ করেন। রাইমা সেন নিজের ভূমিকায় সাবলীল। হিন্দি, বাংলা এবং ইংরেজি ভাষার মিশ্র ব্যবহারে নির্মিত এই ছবিতে, দেবজ্যোতি মিশ্র সুরারোপিত গানগুলি মন ছোঁয়া। বিশেষতঃ একটা গান আমার খুব ভাল লেগেছেঃক্যায়সি আজিব দাওয়াত হ্যায় ইয়েহ
ম্যাঁয় বিন বুলা মেহমান
ঘরওয়ালা কাহাঁ লা-পতা
সব ছোড়কে সুনসান।
আজিব সি দাওয়াত হ্যায় ইয়েহ
কৌন করে কিসকা ইন্তেজার
মেহমান থি না জানে কব হুই
ইস ঘরকি জিম্মেদার।
দাওয়াত শায়দ খতম হুই ফির
সব লোগ যা রহে হ্যায় ঘর
সির্ফ বিন বুলায়ে খড়ি হুঁ ম্যায়
ঘরওয়ালা আ জায়ে অগর…পটভূমিকায় এই গানকে রেখে সিদ্ধার্থের ফাঁকা ফ্ল্যাটে তার শূণ্যচিত্ত মা আরতি আর প্রেমিক অর্নব প্যাকিং করার শেষে এক সাথে খেতে বসেন , সঙ্গ দেয় সিদ্ধার্থের মায়ের জন্য কিনে রাখা আচারের শিশি।আরতি, সাহানা আর অর্নব। সম্পর্কের ত্রিমাত্রিক বহুভূজে, তিনটি বিন্দুতে দাঁড়িয়ে থাকা তিনটি মানুষ। সিদ্ধার্থ অধিকৃত বিন্দুটির হটাত অপসারণে বাকি বিন্দুগুলির অবস্থান পরিবর্তিত হয়, দূরত্বের দৈর্ঘ্য কমে বা বাড়ে। তৈরি হয় নতুন সম্পর্কের সূত্র। নিজের বাড়ি ফিরে যাওয়ার আগে আরতি অর্নবকে জানিয়ে যান, তিনি শোকসভার থেকে বেশি পছন্দ করেন জন্মদিন পালন করতে। তাঁর কথার মান রাখতেই যেন শহর কলকাতার রক্ষণাবেক্ষনকারীরা অতি দ্রুত বদলে দেয় সিদ্ধার্থের মৃত্যুর সাক্ষী পথের ধারের ভাঙ্গাচোরা রেলিং এর অংশ।শেষ হয় বহুমাত্রিক ভালবাসার গল্প – মেমরিজ ইন মার্চ – বাসন্তী স্মৃতিগুলি। রেখে যায় এক বেদনাবিধুর ভাললাগা।