যে কারণে এই পোস্ট-এর অবতারনা, সেই কথাতে শুরুতেই আসি। সঙ্গের ছবিটি এই মাসে ইচ্ছামতীর সম্পাদকীয়-এর সঙ্গে প্রকাশিত হল। গত ২১ তারিখ রাতের দিকে এই ছবিটি সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করার পর পরই, দুইজন বন্ধু অনুমতি চান, ছবিটি নিজেদের প্রোফাইল কভার বানানোর জন্য। আমাদের ভাবনার সঙ্গে আরও কিছু বন্ধুর ভাবনা মিলে গেছে --- এইটাই আমাদের পরম প্রাপ্তি। এই অভূতপূর্ব সময়ের একটুকরো দলিল হয়ে থাক ইচ্ছামতীতে প্রকাশিত এই ছবি, সঙ্গে দুচারটে কথা --- এইটুকুই আমাদের ক্ষমতা। আর এমন অভিজ্ঞতা যখন হল, তখন ছবিটি নিয়ে, এবং ছবির শিল্পীকে নিয়ে অল্প লিখতে ইচ্ছে হল।

এই ছবিটি এঁকেছেন অনুভব সোম। অনুভব একজন পেশাদার চিত্রশিল্পী এবং শিক্ষক। ব্যক্তিগত ভাবে তাঁর সঙ্গে পরিচিতি প্রায় জন্মান্তরের - তিনি ভ্রাতৃপ্রতিম, আমার ভাই-এর ইশকুল্‌বেলার বন্ধু,এবং সেই ছোট্টবেলা থেকে আমরা তার আঁকা এবং কোলাজের অন্ধ ভক্ত। কিন্তু এখন তো আর ছোটবেলার মত অফুরন্ত সময় হাতে নেই। তবুও, ইচ্ছামতীর জন্য ছবি আঁকার কথা এলে, অনুভবের মুখে না শুনতে হয়নি এখনও। এই জন্য আমি তাঁর কাছে আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ।

দুর্গাপুজোর সময়ে ইচ্ছামতীতে নতুন লেখা পোস্ট হবে, আর দুর্গা ঠাকুরের একটা ছবি থাকবে না, তা কি হয়? হয় না। তাই আমাদের পছন্দ মত একটা ছবি তৈরি হয়। গত কয়েক বছর এই ছবি আমাদের এঁকে দিচ্ছেন অনুভব সোম। আমরা আলোচনা করে একটা বিষয়ভাবনায় সম্মত হই, অনুভব সেই ভাবনাকে রূপদান করেন, আমি তার সঙ্গতে দু-চার কথা লিখি। তেমনভাবেই এই ছবিও আমাদের সম্মিলিত ভাবনার ফসল। টিভি চ্যানেল, নিউজ পোর্টাল বা খবরের কাগজের হেডলাইন থেকে অখ্যাত, খেটে খাওয়া সারি সারি মানুষের দল সরে গেছেন কবেই। কিন্তু আমরা জানি, তাঁরা আজও হাঁটছেন। হয়ত তাঁরা এখনও ফিরছেন, হয়ত তাঁরা আবার ফিরে যাচ্ছেন --- কিন্তু পথচলা শেষ হয়নি। তাঁদের কথা মনে রেখে, তাঁদের ভুলে না যাওয়ার জন্যেই আমরা সপরিবারে মা দুর্গাকে মহাসড়কে হাঁটালাম।

একটা ছোট্ট ঘটনা না বললে, এই ছবির গল্প অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। অনুভব যখনই ইচ্ছামতীর কাজ করেন, আমাকে সবসময়ে আঁকার স্কেচ দেখিয়ে নেন। তাঁর মত প্রতিষ্ঠিত, পেশাদার শিল্পীর থেকে এটা একটা শিক্ষণীয় বিষয়। কারণ অনুভবের মতে- কাজ কাজই, আর কিছু নয়। কার জন্য কাজ, ছোট কাজ না বড় কাজ, পারিশ্রমিকের বিনিময়ে না বিনামূল্যে, সেসব ভাবনার আগে রয়েছে কাজের প্রতি সততা। ধাপে ধাপে স্কেচ করে এক সময়ে এই ছবির স্কেচে যোগ হল ওই হাঁসটি। আমি দেখে খানিক ভেবে প্রশ্ন তুলেছিলাম, এই ছবিতে হাঁসটা কি থাকা উচিৎ হবে? পরিযায়ী শ্রমিক পরিবারের নিজেদের থাকা খাওয়ার ঠিক নেই, তারা কি পোষ্যদের সঙ্গে নিয়ে হাঁটার কথা ভেবেছেন? উত্তরে অনুভব আমাকে একটা ফটোগ্রাফ দেখালেন। এক পরিযায়ী মানুষ তাঁর পোষ্য একটি হাঁস আর একটি কুকুরছানাকে কোলে নিয়ে হাঁটছেন। আর দ্বিধা রইল না।

মা দুর্গা সবার সন্তান-সন্ততির দুধ-ভাতের যোগান দিন, এটুকুই প্রার্থনা।