আজ রাখী পূর্নিমা।
আজকের দিনে ভাইয়ের হাতে রেশমি সুতোর দড়ি বেঁধে বোন তার দীর্ঘজীবন কামনা করে। ভাই বোনের অটুট বিশ্বাস আর নির্ভরতার প্রতীক হয়ে থাকে ছোট্ট রাখী।

ভাইয়ের জন্য রাখী কিনতে গেছিলাম। আজকাল বাজারে এত ধরনের রাখী যে বেশ ধন্ধে পড়ে যেতে হয় - নানা রঙের সুতো - কোনটা সুতি, কোনটা রেশমি, কোনটা জরি; মাঝখানে ছোট বড় নানা আয়তনের নানারকমের মোটিফ - তুলসী কাঠের ছোট্ট ফুল থেকে শুরু করে টেরাকোটার গনেশ অবধি সবই আছে। যার যেরকম রুচি, যেরকম পছন্দ বা বাজেট , সেই অনুযায়ী কিনে নিলেই হল।

আমরা যখন ছোট ছিলাম, তখন রাখীর এত রকমফের ছিলনা। একদম ছোটবেলায় বেশি জনপ্রিয় ছিল স্পঞ্জের রাখী। নানা রঙের স্পঞ্জের ছোট-বড়- মেজো টুকরো, মাঝে একটা সোনালি বা রূপোলী রঙের টিনের ফুল, নিচে লাল সুতো। কোন কোন স্পঞ্জের নিচে আবার গোল করে কাটা রাংতার ঝিলিমিলি। কোন রাখীতে আবার অনেকগুলি থাক- তলায় বড় সাদা, তার ওপরে মাঝারী গোলাপী, তার ওপরে ছোট্ট সবুজ স্পঞ্জের টুকরো, তার মাথায় আবার সোনালী ফুল; রাখী নয়, যেন বার্থডে কেক !

তারপরে স্পঞ্জদের সরিয়ে বাজার দখল করল পুরোপুরি রেশমি সুতোর রাখী। নানা রকমের সুন্দর নরম প্যাস্টেল শেডের গোল গোল রেশমের চ্যাপ্টা ফুল, সেই রঙেরই দড়ি; মাঝে একটা সুন্দর  ভেলভেটের নকশা করা ময়ূর কি ফুল।ভাইদের জন্য গোটা তিনেক রাখী কিনলেই হত, কিন্তু মাঝে মধ্যে পছন্দ হয়ে গেলে এক আধটা বেশি কিনতাম- জমিয়ে রাখার জন্য। অনেকগুলো জমে গেছিল এক সময়ে।

এই একটা দিনে দেখতাম, ছেলেরা লাল-নীল নির্বিশেষে বড় বড় রাখী হাতে বেঁধে ঘুরত খুব। নিঃশব্দ প্রতিযোগিতা চলত - কার হাতে ক'টা রাখী, কারটা কত বড়।

এখন যদি ছোট ছোট রাখীর পাশাপাশি ওইরকম বড় রাখী বিক্রি হত, তাহলে কি কিনতাম? কে জানে...সময়ের সাথে সাথে মানুষের রুচি বোধ ও তো পালটে যায়। 

মাঝে মাঝে ভাবতাম, এখনো ভাবি, আমাদের বেশিরভাগ সামাজিক- পারিবারিক উতসবে ছেলেদেরই যত প্রাধান্য। ভাই তাকে বিপদ থেকে রক্ষা করবে বলে বোন তার হাতে রাখী বাঁধে; ভাইফোঁটায় ভাইয়ের দীর্ঘায়ু কামনা করে বোন তাকে ফোঁটা দেয়। বোনেদের হাতে ভাইরা কেন রাখী বেঁধে দেয়না? বোনেরা ভাইদেরকে যে  আদরে যতনে রাখে, তার স্বীকৃতি কই? বোনেরা কি ভাইদের রক্ষা করে চলেনা?  রাখীর বদলে কোন উপহার না দিয়ে ভাইও যদি বোনকে একটা রাখী বেঁধে দেয়, তো কেমন হয়?