( শ্রীমতী নবনীতা দেবসেনের সান্নিধ্যে আসার সুযোগ ঘটেছিল হঠাৎ -ই, কাজের সূত্রে। মাত্র তিন বছর আমি নবনীতাদিকে অল্প কাছ থেকে জানার সময় বা সুযোগ পেয়েছি। এই লেখাটি ভালো-বাসা বাড়ির নবনীতাদিকে নিয়ে আমার স্মৃতিভান্ডারের খানিক অংশ, বিদুষী নবনীতা দেবসেনের কর্মকান্ডের আলোচনা বা সাহিত্যকর্মের মূল্যায়ন নয়। আজ ৭ নভেম্বর।)

২০১৭ সালের ২৩ আর ২৪ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হল সেই বছরের 'সইমেলা'। দুইদিন হইহই করে কেটে গেল । ২৪ তারিখ রাতে, অনুষ্ঠান শেষে সবাই মিলে ডিনার খেয়ে বাড়ি ফেরার পালা। ভেন্যু থেকে  যখন বেরোচ্ছি, বেশ রাত হয়ে গেছে । ওলা বা উবার বুক করব ভাবছি, এমন সময়ে শ্রাবস্তী আমাকে আর দেবলীনাকে ডেকে বললেন, তোমরা তো একই দিকে থাকো; এত রাতে ট্যাক্সি ডাকতে হবে না। আমি তোমাদের পৌঁছে দেব। গাড়িতে পেছনের সীটে আমি আর দেবলীনা বসলাম। সামনে শ্রাবস্তীর পাশে নবনীতাদি। ওঁকে বাড়িতে নামিয়ে আর কিছু জিনিস  বাড়ি পৌঁছে তারপরে আমরা ফিরব। 'ভালো-বাসা' বাড়ির সামনে জিনিসপত্র নামল, কিন্তু নবনীতাদি থেকে গেলেন। দিদির ইচ্ছে, এক্ষণি বাড়ি না ঢুকে একটু বেড়িয়ে আসা যাক। আমি আর দেবলীনা পেছনের সীটে চকচকে চোখে একে অপরকে দেখে নিলাম।নবনীতাদির সঙ্গে মাঝরাত্রে গাড়ি করে কলকাতা ঘোরা! গড়িয়াহাট থেকে গাড়ি আবার বেরোল। এদিক ওদিক কয়েক পাক দিয়ে আমরা দাঁড়ালাম পি জি হস্‌পিটালের পাশে, হরিশ মুখার্জি রোডের বিখ্যাত ধাবার কাছে। সেখানে মধ্যরাতেও গমগমে ভীড়। গাড়িতে বসে বড় বড় ভাঁড়ে দিদির পছন্দের মালাই-চা খাওয়া হল। এবারে বাড়ির পথ ধরা। হরিশ মুখার্জি রোড থেকে বাইপাসের দূরত্ব খুব কম নয়। দিদি নানা রকমের গল্প করছেন, আমরা মূলতঃ শ্রোতা, মাঝেমধ্যে টুকটাক কথা বলছি। গাড়ির স্টিরিওতে মৃদুস্বরে ধীরগতির বাংলা গান চলছিল। এক সময়ে সেটা বন্ধ হল। দিদি বললেন, অনেক্ষণ বাংলা শুনেছি, আমরা হিন্দি গান শুনি বরং...কীরে, তোরা হিন্দি গান জানিস না?দেবলীনা কী ভেবেছিল জানি না,আমি শুনে নড়েচড়ে বসেছি, ভাবছি নবনীতা দেবসেনের সামনে কোন হিন্দি গান গাওয়া উচিত... কিছু একটা ধীর সুরের আশি বা নব্বই-এর দশকের গান হাল্কা করে শুরুও করেছিলাম, এমন সময়ে দিদি বললেন-আমাদের সময়ে কী গান হত শুনবি? বলেই জোরে গেয়ে উঠলেন -'গোরে গোরে/বাঁকে ছোড়ে/ কভি মেরি গলি আয়া করো...' --- আমরাও সবাই হেসে, হাততালি দিয়ে সেই গানে যোগ দিলাম। সেই ২৪-২৫ এপ্রিলের মধ্যরাতে, অভিসার শপিং কমপ্লেক্সের সামনে, ট্রাফিক সিগ্‌ন্যালে আটকে থাকা গাড়ির মধ্যে,-- আগের ছয়-সাত মাসের সদ্য পরিচিতির বাধা পেরিয়ে নবনীতাদি দেবসেন-এর সঙ্গে বোধহয় আমার বন্ধুত্ব হয়েছিল।

নবনীতা দেবসেন আমার বন্ধু---এমন চিন্তা মুখে বলার বা মনে ভাবার কথা আমার মত অকিঞ্চিৎকর মানুষের নয় । কিন্তু নবনীতাদি অবলীলাক্রমে বলতেন। বেশ কয়েকবার, 'ভালো-বাসা' বাড়িতে , হয়ত আমরা কোনো মিটিং বা কাজের কথার জন্য গেছি, অন্য অতিথিরাও এসেছেন, যাঁদের সঙ্গে আমার কোনোরকমের আলাপ-পরিচয় নেই। তাঁদের সামনে নবনীতাদি পরিচয় দিয়েছেন - ও আমার বন্ধু। উল্টোদিক থেকে অবাক চাহনি কিংবা সরাসরি প্রশ্নের উত্তর গেছে- হ্যাঁ, বয়সে অনেক ছোট, কিন্তু আমরা বন্ধু... ওদের থেকে আমি কত কিছু শিখি ...সঙ্গে হয়ত আরও দুটি প্রশংসা বাক্য। এই সমস্ত সময়ে আমি চুপচাপ পাশে বসে থেকে শিক্ষা নিয়েছি - কেমন ভাবে নিজে থেকে হাত বাড়িয়ে মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে হয়, কেমনভাবে বয়সে ছোট মানুষকে সম্মান দিতে হয়, কেমন ভাবে নিত্যনতুন বিষয়ে শেখার আগ্রহ নিজের ভেতরে লালন করে রাখতে হয়। আমি একা নিশ্চয় নই, এমন একই অভিজ্ঞতা নিশ্চয় আরও অনেক অনেক মানুষের আছে- যাঁরা বিভিন্ন কারণে নবনীতাদির স্নেহচ্ছায়ায় আসতে পেরেছিলেন।

'বন্ধু' বলে যেমন পরিচয় দিতেন, বেশিরভাগ সময়ে ঠিক সমবয়সী বন্ধুর মত ব্যবহার ও করতেন। কেউ সুন্দর করে সেজে গেলে সামনেই বলতেন, 'তোকে কী সুন্দর লাগছে !' কোনো গল্পের বই কেউ পড়েছে, দিদি পড়েন নি, অমনি আবদার করতেন - 'আমাকে এনে দিস তো, পড়ব।' আবার 'ভালো-বাসা' তে ঢোকার আগে হয়ত গড়িয়াহাটে কিছু কিনেছি, হাতে প্যাকেট দেখে একেবারে  বন্ধুর মত 'কী কিনেছিস দেখি?' বলতেও দিদির বাধা ছিল না। একেকদিন ফোন করে 'সই' নিয়ে অনেকক্ষণ ধরে নানা রকম ভাবনা ভাগ করে নেওয়া, আলোচনা সব করে ফেলতেন; অনেক সময়েই  ব্যক্তিগত নানা দুঃখের এবং আনন্দের অভিজ্ঞতার গল্প অকপটে ভাগ করে নিতেন; শেষের দিকে 'সই' এর মিটিং থাকলেই ফোন কিংবা এস এম এস করতেন - অমুক তারিখ মিটিং ,মনে আছে তো? --- এমন 'বন্ধু'সুলভ নানারকমের কাজ নবনীতাদি অবলীলায় করে ফেলতেন। সেইসব আলাপ -আলোচনা শেষ হলে আমি ভাবতাম-নবনীতাদি আমার সঙ্গে এইসব আলোচনা করলেন ! এটাও কী সম্ভব ! নবনীতাদির প্রশ্রয় ছিল বলেই তাঁর কোনো বকুনিতে অভিমানবোধ করার অধিকার ও এসে গেছিল হয়ত। চলে যাওয়ার এক বছর পরে দিদিকে নিয়ে লেখার  চেষ্টা করতে গিয়ে বুঝতে পারছি, নবনীতাদির সান্নিধ্যে আমি মাত্র তিন বছরে যে অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে গেছি, যত অনুভূতির মধ্যে দিয়ে গেছি, সেই অভিজ্ঞতা ও অনুভূতির সবটুকু কথায় যথার্থভাবে প্রকাশ করতে আমি অক্ষম । বোধহয়, সব কিছু ছাপিয়ে যেটা থেকে গেছে , তা হল বিস্ময়। নবনীতা দেবসেন প্রতিনিয়ত আমাকে বিস্মিত করতেন, বিস্মিত করেন।

কোনো এক সপ্তাহে প্রতিদিন রোববার-এর 'ভালোবাসার বারান্দা'-তে একখানা কোনো সুপ্রাচীন ইউরোপীয় মহাকাব্য কিংবা সমতূল্য কোনো পাঠ্যের খানিকটা অংশের গল্প লিখেছিলেন। অনেক  একেবারেই না শোনা রাজা, রানী, যুদ্ধ  ইত্যাদিকে নিয়ে সেই কাহিনি । সেই লেখাটা পড়ার পরে পরেই একদিন গেছি, আর বলেছি- দিদি ,লেখাটা কী ভালো লেগেছে, এমন সব গল্প তো আমার  জানাই ছিল না। শুনে বললেন - অনেকদিন আগে পড়েছি জানিস তো, তাই মনে করে করে লিখতে একটু ভাবতে হচ্ছিল। সেই অনেকদিন আগে মানে হল অন্তত যখন অধ্যাপনায় ছিলেন, সেই সময়কাল! মনে করে করে কেন লিখতে হচ্ছিল? এমন প্রশ্ন শুনে মজা করে বললেন- কোথায় বসে লিখেছি বলতো? বলে নিজেই উত্তর দিলেন - এয়ারপোর্টে!  ফ্লাইটের জন্য অপেক্ষা করতে করতে। আমার বিস্ফারিত চোখ মুখ স্বাভাবিক হতে  কয়েক মূহুর্ত লেগেছিল, কারণ অমন একটা  লেখা আমি পাশে রেফারেন্স বই আর হাতের মুঠোয় ইন্টারনেট ছাড়া লেখার কথা ভাবতেই পারব না । অন্যদিকে আবার,  এই নবনীতাদিই  নিজের হাতে কিছু দরকারি অ্যাপ্লিকেশন কাগজে লিখে হাতে দিয়ে বলছেন- দেখে দে তো , গ্রামার ঠিক লিখেছি কি না; কিংবা মেসেজ করেছেন- সময় করে একদিন আসিস , কম্পিউটারের কিছু জিনিস ভুলে গেছি, আমাকে একটু শিখিয়ে দিবি। সইমেলার কর্মকান্ড চলাকালীন দেখেছি, শরীর যতই খারাপ থাক, নবনীতাদি সমস্ত কাজের সমস্ত কিছুর খবর নিজে যতক্ষণ না জানছেন, ততক্ষণ সুস্থির হয়ে বসতেন না। শুরু থেকে শেষ অবধি সমস্ত কিছু নখদর্পনে থাকা চাই। একদিকে দুনিয়ার যত প্রাজ্ঞ মানুষ, সবাই ওঁর বন্ধু। যাঁদের লেখার রেফারেন্স কলেজে-ইউনিভার্সিটিতে পড়তে হয়েছে, যাঁদের নাম আমরা হাঁ করে শুনি, দেশের এবং বিদেশের তেমন কতশত মানুষকে দিদি প্রথম নাম ধরে ডাকেন। অন্যদিকে এই মানুষটিই একই নিঃশ্বাসে রান্নার রেসিপি কিংবা শাড়ির রং নিয়েও আমাদের সঙ্গে গল্প করেছেন।

নবনীতাদির থেকে, আমি আরও একটা জিনিস  শিখেছি। শিখেছি কীভাবে হিসেবমাফিক বয়সের এবং অসুস্থতার তোয়াক্কা না করে, সর্বদা নিজেকে সবার সামনে সুন্দরভাবে উপস্থিত করতে হয়। তিন বছরের মধ্যে হয়ত হাতে গুণে আমি দুই বা তিন দিন দিদিকে দেখেছি বাড়ির পোশাকে আমাদের সঙ্গে দেখা করতে। সেই দিন গুলিতে দিদির শরীর খুব বেশি খারাপ থাকত । বাকি দিনগুলি আমাদের দেখা হত ঝলমলে, সুসজ্জিতা নবনীতাদির সঙ্গে। হয়ত সঙ্গে রয়েছে পোর্টেব্‌ল্‌ অক্সিজেন ক্যান, তার সাহায্যে স্বাচ্ছন্দ্য পাচ্ছে  শ্বাস প্রণালী। কিন্তু যেহেতু সেদিন সই-সভা, তাই সেসব সঙ্গে নিয়েই আমাদের মাঝখানে একেবারে অনুষ্ঠানের মেজাজে পরিপাটি পোশাকে এসে বসতেন দিদি।

একদিন একটা ছোট মিটিং ছিল। নবনীতাদির তখন বেশ শরীর খারাপ। তাই তিনতলায় দিদির নিজের ঘরেই মিটিং হচ্ছে। আমি সাদা-কালো রঙে মেশানো পোষাক পরে গেছিলাম। সঙ্গে একই রকমের সাদা-কালো গয়না। আমাকে খানিক্ষণ দেখে বললেন, হাতের চুড়িটা তো ঠিক মেলেনি । দাঁড়া...বলে ঝর্নাদিকে ডেকে একখানা ছোট ব্যাগ আনালেন। তার মধ্যে থেকে বেরোলো তাঁর নিজের পছন্দের যত শৌখিন পুঁতি, কাপড়ের পুরনো গয়না, চুড়ি এইসব। সেখান থেকে বেছে একখানা সাদা-কালো সুতো জড়ানো কাঠের চুড়ি আমাকে দিয়ে বললেন, এইটা পরে নে। আমার হাতে কালো চুড়ির বদলে , একটু চেপেচুপে ঢুকে গেল সেই সাদা-কালো সুতোর চুড়ি। দিদি একগাল হেসে বললেন - এইবারে ঠিক মানিয়েছে। সেই চুড়িটা হাতে পরে আমি মনে মনে  ছোট্ট বাচ্চার মত লাফাতে লাফাতে বাড়ি ফিরেছিলাম।

জীবন সম্পর্কে অপার ভালোবাসা এবং অগাধ মমতা ছিল বলেই বোধ হয় দিদি খুব সামান্য জিনিস  উপহার পেলেও খুব খুশি হতেন - নতুন বই, টাটকা ফুল, গাছের চারা -- এমন সব জিনিষ। গতবছর জানুয়ারি মাসে দিদির জন্মদিনের সময়ে আমি যেতে পারিনি, বাড়িতে মা-বাবা দুজনেই অসুস্থ ছিলেন। পরে মার্চ মাস এর শেষের দিকে একখানা ছোট লেখার খাতা দিদির জন্য নিয়ে গেছিলাম। সেই খাতার মলাটটা বাসন্তী রঙের কাপড়ে মুড়ে তার ওপরে অল্প এম্ব্রয়ডারি করে নকশা করেছিলাম। সেটা পেয়ে আর আমি নিজেই সেলাই করেছি শুনে ছোট্ট মেয়ের মত খুশি হয়েছিলেন দিদি। কানাইদা, ঝর্নাদি - সবাইকে ডেকে ডেকে বলেছিলেন- দ্যাখো, ও নিজে আমার জন্য বানিয়েছে। কত সময় নিয়ে বানিয়েছে। আমার জন্য কত সময় দিয়েছে...গতবছর অগাস্ট মাসে যখন দিদির শরীর খুব খারাপ, চিকিৎসার জন্য দিল্লি যাওয়ার কথা হচ্ছে, এমন সময়ে একদিন , আগে থেকে অনুমতি নিয়ে অল্প কিছুক্ষণের জন্য দিদির সঙ্গে দেখা করতে গেছিলাম।  মন খারাপ ছিল। দিদির জন্য একটা ছোট কার্ড বানাব ভেবে, শেষ অবধি কুইলিং স্ট্রিপ্‌স্‌ আর রঙিন  কাগজ জুড়ে -টুড়ে যেটা তৈরি হল, সেটা একটা ছোট পোস্টার হয়ে দাঁড়াল। তাও তাড়াহুড়োতে সেটা পেছনের বোর্ড যথেষ্ট শক্ত হল না। তবুও নিয়ে গেলাম। দিদি সেই কয়েকটা কাগজের ফুল পাতার দিকে তাকিয়ে  অনেকবার বলেছিলেন --- এটা তুই আমার কথা ভেবে বানিয়েছিস, তার মানে যতক্ষণ বানিয়েছিস, ততক্ষণ তুই আমার কথা ভেবেছিস...আজকের এই 'রিটার্ন গিফ্‌ট্‌' এর যুগে, এমন ভাবনা আমাদের মনে আসবে কি কোনোদিন? ওই অল্প কিছু মূহুর্ত দিদি খুশি ছিলেন, এটাই চাওয়ার ছিল।

'সই'- এর নির্ধারিত মিটিং-এর দিনগুলি ছাড়া আলাদা, একা ,বিনা কারণে নবনীতাদির সঙ্গে দেখা করতে গেছি মোটে একবার। দিদি কিন্তু বলতেন, এদিকে এলে চলে আসবি, গল্প করে যাবি, কিন্তু আমার যেতে অস্বস্তি হত। মনে হত, এত ব্যস্ত মানুষ, এত লেখালিখি, কাজকর্মের মধ্যে থাকেন দিদি, আমি শুধুশুধু গিয়ে দিদির সময় নষ্ট করাব না তো? তাই ওই একদিন ছাড়া আর বিনা কারণে কোনোদিন  যাওয়া হয়ে ওঠেনি। 'আপনি'-র বদলে 'তুমি'-ও বলতে ইচ্ছে করেনি কোনোদিন। দিদি না চাইলে খুব ব্যক্তিগত আলোচনা থেকে বিরত রেখেছি নিজেকে। তাই  সুযোগ থাকা সত্বেও, নবনীতাদিকে আলাদা করে  সেভাবে বলাও হয়ে ওঠেনি, ঝড়ের মুখে দাঁড়িয়ে নিজের অজান্তেই একদিন নবনীতাদিকে জীবনবোধের দীক্ষাগুরুর আসনে বসিয়েছি।  এক চরম মানসিক দুঃসময়ে, ভেঙে গুঁড়িয়ে টুকরো হয়ে যাওয়া থেকে আমাকে ফিরিয়ে এনেছিল নবনীতাদির  কলম - ওঁর লেখা একটা ছোট্ট বই। মৃত সম্পর্ক পেছনে ফেলে একবস্ত্রে পথে নামার সময়ে অবশ্যপ্রয়োজনীয় কিছু জিনিস ছাড়া ব্যাগে ভরেছিলাম ওই পাতলা বইখানা। মনে হয়েছিল, ওই বইটাই আমাকে ডুবতে দেবে না। সত্যিই দেয়নি । 'সীতা থেকে শুরু' আমার নিজস্ব ধর্মগ্রন্থ, বহুদিনের একলা পথচলার নিরন্তর সঙ্গী, রাতের আঁধারে আলো, আর দিনের তাপে ছায়া।

নবনীতাদি অনেক রাত অবধি জেগে থাকতেন। বেশিরভাগ সময়ে ফোন গুলি ওইরকম মধ্যরাত পেরিয়েই করতেন। সেই  নকশা করা  মলাটের খাতা দিয়ে আসার কয়েকদিন পরে, এমনি এক গভীর রাতে আমার কাছে হোয়াটস্যাপে মেসেজ এসেছিল -

'মলাটের রং বাসন্তী
আবার কবে আসন্তি?'

এমন মেসেজ নবনীতাদিই পাঠাতে পারতেন!
সেই মেসেজ পেয়ে আমি আহ্লাদে আটখানা হয়ে, দুঃসাহসে তাল মিলিয়ে উত্তর পাঠালাম

'ইচ্ছে তো হয় যখন তখন
এক দৌড়ে যাওন্তি...... '
- এমন আরও কিছু বাক্য ছিল।

তার উত্তর এসেছিল -
' ভীষণ আদর করোন্তি '

ওই ভীষণ আদর... আমি সৌভাগ্যক্রমে কয়েকদিন মাত্র পেয়েছিলাম।