বহুদিন পর ঝড় বৃষ্টির কারণে, বেশ দেরী করে, মওকাবাজ অটোচালককে স্বাভাবিকের দ্বিগুনের বেশি ভাড়া দিয়ে বাড়ি ফিরলাম। পাড়ার সব দোকানপাটই তখন প্রায় বন্ধ। একটি সদ্য প্রতিষ্ঠিত ঝাঁচকচককে দোকানে ঝলমলে আলোর নিচে দুই বিশাল লাল কাপড় ঢাকা হাঁড়ি, আর হাঁড়িদুটির পেছনে অনুরূপ মুখে দুটি মানুষ...অবশ্যই অনন্তের অপেক্ষায় বসে! বাঙালির ন্যাশনাল ফুডের গন্ধের সাথে মিলে মিশে গেছে সোঁদা বাতাসের সুবাস। পাড়ার সব্জিবিক্রেতা ছেলেটির ভ্যানের ওপর সদ্যস্নাত কলমী, নটে, পুঁই, পাট এলিয়ে পড়ে হ্যালোজেনের চড়া আলোয় চকচকে শরীর শুকোচ্ছে। রাস্তার ধারে নিঝুম আবাসনের পাঁচিল ঘেঁষে, চারচাকার ঘেরাটোপে গভীর রাতের রোমাঞ্চ শুষে নিতে মশগুল অন্য পাড়ার ছেলেমেয়েরা। ভেজা রাস্তায় ইতস্তত ছড়িয়ে আবর্জনা এবং ফুল, পাতা বা গাছের ডাল। এমন রাতে নিজের পাড়াকেও অপরিচিত লাগে।

একটু এগিয়ে পাড়ার পুরনো ধোপার গুমটি পেরিয়েই দেখি মাঝ রাস্তায় সে পড়ে আছে। ভাগ্যিস গুমটির ওপর পড়েনি। রাধাচূড়া গাছটার নিচেই যে ওই গুমটি! আজ ঝড় যখন শুরু হয়েছে তখন আমি মিনিট পাঁচেক পথে ছিলাম। ওই অল্প সময়ে শুধুই মনে হয়েছে- গাছ ভেঙে না মাথায় পড়ে, নতুন করে অনুভব করেছি ঝড়বৃষ্টিতে আটকে পড়া নিত্যযাত্রীদের আতংক।

কিন্তু আপাতত ঝড়বৃষ্টি হচ্ছে না। কয়েক মূহূর্তের স্থিরতা; তারপরেই ভেঙে নিলাম কিছু ফুলযুক্ত শক্ত সরু ডাল।

রাধাচূড়া অন্দরসজ্জার উপযুক্ত ফুল নয়। এই নরম হলদে ফুলগুলি আগামিকালই ম্রিয়মাণ হয়ে পড়বে। দমকা হাওয়ায় রাস্তায় ঝরে পড়ে পদপিষ্ট হতে আপত্তি নেই, কিন্তু ফুলদানিতে শোভা পেতে নারাজ এই নিরীহ কিন্তু দামাল ফুলেরা। একেবারেই সংসারী নয়। তবুও, এক রাতের জন্য হলেও কয়েকটাকে ঘরে নিয়ে এলাম। আমার ছোটবেলার অনেক রঙিন ছবির সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে আছে এই হলুদ রাধাচূড়ারা। আর কালবৈশাখী স্নাত বিকেলের রাধাচূড়ায় ছাওয়া পথঘাট।

এক রাতের জন্য নাহয় আমার ঘরের অতিথি হয়ে থাকুক আমার ছোটবেলা।